সিস্টেমিক লিউপাস ইরিথেমাটোসাস  


বিবরণ 2016
diagnosis
treatment
causes
Systemic Lupus Erythematosus
সিস্টেমিক লিউপাস ইরিথেমাটোসাস
পরিশিষ্ট ১। এন্টিফসফলিপিড এন্টিবডিজ পরিশিষ্ট ২, নিউন্যাটাল (নবজাতক)এর লিউপাস
evidence-based
consensus opinion
2016
PRINTO PReS
১। সিস্টেমিক লিউপাস ইরিথেমাটোসাস কী?
২। রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা
৩. প্রাত্যাহিক জীবনযাপন
৪. পরিশিষ্ট ১। এন্টিফসফলিপিড এন্টিবডিজ
৫। পরিশিষ্ট ২, নিউন্যাটাল (নবজাতক)এর লিউপাস



১। সিস্টেমিক লিউপাস ইরিথেমাটোসাস কী?

১.১ এটা কী?
সিস্টেমিকলিউপাস ইরিথেমাটোসাস (এসএলই) একটি দীর্ঘস্থায়ী স্বত:প্রতিরোধী রোগ যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিশেষ করে চর্ম, গিরা, রক্ত, কিডনি এবং কেন্দ্রীয় স্নায়ু সিস্টেমকে আক্রান্ত করে। এটা ক্রনিক এর অর্থ হল এটা দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়। এটা অটোইম্মিউন, মানে হল এর ফলে রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়ায় গোলযোগ দেখা দেয় যা শরীরকে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসকে হতে সুরক্ষা দেয়ার বদলে রোগীর টিস্যু বা কলাগুলোকে আক্রমণ করে।
সিস্টেমিক লিউপাস ইরিথেমাটোসাস নামটির উৎপত্তি বিশ শতকের শুরুতে। সিস্টেমেটিক শব্দটি দ্বারা বুঝায় যে এটা শরীরের অনেক অঙ্গকে আক্রান্ত করে। আর লিউপাস শব্দটি এসেছে একটি ল্যাটিন শব্দ থেকে যার অর্থ নেকড়ে এবং এটা দ্বারা ইঙ্গিত করা হয়েছে মুখের উপর প্রজাপতির মতো র‌্যাশকে যা দেখতে নেকড়ের মুখের উপর সাদা দাগের অনুরূপ। গ্রীক ভাষায় ইরিথেমাটসিস অর্থ লাল এবং এটা দ্বারা চর্মের লাল র‌্যাশকে নির্দেশ করা হয়েছে।

১.২ এটা সচরাচর কেমন দেখতে পাওয়া যায়?
এসএলই সারা বিশ্বে পরিচিত একটি রোগ। এই রোগটি আফ্রিকান আমেরিকা, হিসপানিক, এশীয় ও আমেরিকান বংশদ্ভূত লোকদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। ইউরোপে প্রায় ১:২,৫০০ লোককে এই রোগে আক্রান্ত বলে সনাক্ত করা হয়েছে এবং লিউপাস রোগীদের প্রায় ১৫% এর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি তাদের বয়স ১৮ পেরোবার পূর্বেই নির্ণয় করা হয়েছে। এসএলই খুব কম ক্ষেত্রেই ৫ বছর বয়সের পূর্বে শুরু হয় এবং কৈশোর শুরুর আগে এটা সচরাচর দেখা দেয় না। ১৮ বছরের পূর্বেই এসএলই দেখা দিলে, চিকিৎসকগণ এর ভিন্ন নাম দিয়ে থাকেন: পেডিয়াট্রিক এসএলই, জুভেনাইল (কিশোর) এসএলই, শৈশব-প্রারম্ভিক এসএলই। সন্তান জন্মদানে সক্ষম মহিলাগণ (১৫ থেকে ৪৫ বছরের)ই বেশি আক্রান্ত হন এবং সেই বিশেষ বয়স গ্রুপে, আক্রান্ত মহিলা ও পুরুষের অনুপাত ৯:১। বয়:সন্ধির পূর্বে, আক্রান্ত পুরুষের অনুপাত বেশি এবং তখন প্রত্যেক ৫টি এসএলই আক্রান্ত শিশুর মধ্যে ১ টি হচ্ছে পুরুষ।

১.৩ এই রোগের কারনগুলো কী কী?
এসএলই সংক্রামক নয়। এটি একটি স্বত:প্রতিরোধী রোগ যেখানে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা একটি ভিন্ন পদার্থ ও একজন ব্যক্তির নিজের টিস্যু সেলের মধ্যে পার্থক্য করতে এর যে ক্ষমতা তা হারিয়ে ফেলে। ইম্মিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অন্যান্য বস্তুর মধ্যে অটোএন্টিবডি তৈরি করে যা ঐ ব্যক্তির নিজের স্বাভাবিক কোষকে ভিনদেশী হিসেবে সনাক্ত করে আক্রমণ করে। ফল দাড়ায় একটি অটোইম্মিউন সিস্টেমে যা বিশেষ অঙ্গের (গিরা, কিডনি, চর্ম, ইত্যাদির) প্রদাহ। প্রদাহ বলতে বুঝায় শরীরের আক্রান্ত অঙ্গ গরম, লাল, ফোলা ও কখনো কখনো স্পর্শকাতর হয়ে ওঠে। প্রদাহের লক্ষ্যণগুলো দীর্ঘস্থায়ী হলে, যেমনটা হতে পারে এসএলইর ক্ষেত্রে, টিস্যুর ক্ষতি হতে পারে এবং স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত হয়। এই কারণে এসএলইর চিকিৎসা করার সময় প্রদাহ হ্রাস একটি লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
বহুবিধ উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া ঝুকিগুলোর সাথে এলোমেলো ভাবে পারিপার্শ্বিক নির্ণায়কগুলো একত্রিত হলে তা এই অস্বাভাবিক ইম্মিউন সিস্টেমের জন্য দায়ী বিবেচনা করা হয়। এটা জানা বিষয় যে, বিভিন্ন কারণে এসএলইর সূত্রপাত ঘটতে পারে। সেগুলোর মধ্যে আছে বয়সন্ধিকালে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, মানসিক চাপ, পারিপার্শ্বিক বিষয় যেমন সূর্যের আলোতে থাকা, ভাইরাসের আক্রমণ এবং চিকিৎসা (যেমন আইসোনিয়াজিড, হাইড্রাল্যাজিন, প্রকেইনামিড, খিচুনীর প্রতিশোধ ব্যবহৃত ঔষধ )।

১.৪ এটা কি উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া?
এসএলই পরিবারে ধারাবাহিকভাবে চলতে পারে। শিশুরা পিতামাতার কাছ থেকে এখনও অজ্ঞাত কিছু বৈশিষ্ট্্য উত্তরাধিকারসূত্রে পেতে পারে যেগুলো তাদের এসএলই আক্রান্ত হওয়ার পটভূমি হিসেবে কাজ করতে পারে। পারিবারিকভাবে এসএলইর ইতিহাস থাকলেই যে তারা তাতে আক্রান্ত হবে এমনটি না ও হতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে তাদের রোগের আক্রমণের সম্ভাবনা বেশি থাকে। উদাহরণস্বরূপ, দুটি দেখতে হুবহু একই রকম শিশুর একটি এসএলইতে আক্রান্ত হলে অপরটির আক্রান্ত হওয়ার ঝুকি অনধিক ৫০%। এসএলইর জন্য কোন জেনেরিক টেস্ট বা বংশগত পরীক্ষার ব্যবস্থা নাই।

১.৬ এটা কি নির্মুলযোগ্য?
এসএলই নির্মুল করা যায় না। তবে এই রোগটির সূচনা করতে পারে বা রোগটির তীব্রতা ঘটাতে পারে আক্রান্ত শিশু যেন এমন কিছুর (যেমন সানস্ক্রিন ব্যবহার না করে সূর্যালোকের সংস্পর্শে আসা, কতিপয় ভাইরাসের আক্রমণ, মানসিক চাপ, হরমোন ও কিছু কিছু ঔষধ) সংস্পর্শে না আসে।

১৬.১ এটা কি সংক্রামক?
এসএলই সংক্রামক নয়। এর অর্থ হলো এটা এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিকে সংক্রমিত হয় না।

১.৭ প্রধান প্রধান লক্ষ্যণগুলো কী?
রোগটি ধীরে ধীরে শুরু হতে পারে এবং কয়েক সপ্তাহ, মাস বা বছর ধরে নতুন নতুন লক্ষন প্রকাশ পেতে পারে। অনির্দিষ্ট অভিযোগগুলো যেমনঃ অবষাদ ও ক্লান্তি বোধ শিশুদের ক্ষেত্রে এসএলইর বেলায় সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হিসাবে বিবেচিত। এসএলইতে আক্রান্ত অনেক শিশুর থেমে থেমে জ্বর বা একটানা জ্বর থাকে। তাদের ওজনহানি হয় এবং ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়।
সময়ের সাথে সাথে অনেক শিশুরই বিশেষ লক্ষন প্রকাশ পায় যেগুলো শরীরের এক বা একাধিক অঙ্গের সংশ্লিষ্টতার কারণে হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে চর্ম এবং পেশীসংক্রান্ত সংশ্লিষ্টতাই বেশি যাদের কারণে বিভিন্ন রকমের চর্ম র‌্যাশ, আলোক সংবেদনশীলতা (যেখানে সূর্যালোক দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার কারণে র‌্যাশ হতে পারে) বা নাক বা মুখের ভেতরে ঘা। নাক ও গালের উপর গতানুগতিক ধরণের প্রজাপতি র‌্যাশ আক্রান্ত শিশুদের এক তৃতীয়াংশ বা অর্ধেকের বেলায় ঘটে থাকে। অত্যধিক চুল ঝড়ে পড়া (এলোপেসিয়া) ও কখনো কখনো চোখে পড়তে পারে। হাতগুলো ঠান্ডা কিছুর স্পর্শে লাল, সাদা এবং নীল হয়ে যায় (র‌্যানোডস ফেনোমেনন)। লক্ষণ হিসেবে ফোলে যাওয়া ও স্টিফ বা শক্ত হয়ে থাকা গিরা, পেশীতে ব্যথা, এনমিয়া (রক্তাল্পতা), সহজেই কালশিরা পড়া, মাথা ব্যথা, হৃদরোগ ও বুকে ব্যথা হতে পারে। এসএলই আক্রান্ত অধিকাংশ শিশুদের বেলায় কিছু পরিমানে কিডনির সংশ্লিষ্টতা ও থাকতে পারে এবং এই রোগের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব বিষয়ে এটি একটি বড় ধরনের নির্ণায়ক।
অধিকাংশ কিডনির সংশ্লিষ্টতার সর্বাধিক প্রচলিত লক্ষণ হলো উচ্চ রক্তচাপ, প্রসাবে ও রক্তে প্রোটিন দেখা যেতে পারে। পাশাপাশি পায়ের পাতা, পা ও চোখের পাতায় ফোলে উঠতে পারে।

১.৮ এই রোগটি কি প্রত্যেক শিশুর বেলায় একই রকম?
এসএলই রোগটি শিশু থেকে শিশুতে ব্যাপকভাবে ভিন্ন হয় এবং প্রতিটি শিশুর লক্ষণগুলো ও আলাদা হয়ে থাকে। উপরে বর্ণিত সবগুলো লক্ষ্যণই এসএলইর শুরুতে বা রোগের যে কোন পর্যায়ে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রা নিয়ে ঘটতে পারে। আপনার লিউপাস ডাক্তার যে ঔষধগুলো নিতে বলেছিল, সেগুলো নিয়ে আপনি এসএলই এর লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রন করতে পারেন।

১.৯ শিশুদের রোগ প্রাপ্ত বয়স্কদের রোগ থেকে ভিন্ন কিনা?
শিশুদের ক্ষেত্রে এসএলই রোগের তীব্রতা প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে বেশি পাশাপাশি যে শিশুদের মধ্যে কোন একটি নির্দিষ্ট সময়ে এসএলইর কারণে প্রদাহের লক্ষ্যন ধীরে ধীরে দেখা দেয়। এসএলই আক্রান্ত শিশুরা এসএলই আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে বেশি হারে কিডনি ও ¯œায়ু রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে।


২। রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা

২.১ কিভাবে এটা ধরা পড়ে?
ব্যাথা ও জ্বর পাশাপাশি রক্ত এবং প্রসাব পরীক্ষা করে এই রোগের সাথে অন্য রোগগুলোকে পৃথক করা যায়। কোন নির্দিষ্ট সময়ে সবগুলো লক্ষ্যণ বা চিহ্ন দেখা না ও যেতে পারে এবং এর কারণে এসএলই নির্ণয় করা কঠিন হয়ে উঠে। অন্যান্য রোগ থেকে এসএলইকে আলাদাভাবে সনাক্ত করতে, আমেরিকান কলেজ অব রিউমাটলজি এর ডাক্তারগণ ১১টি বৈশিষ্ট একটি তালিকা প্রণয়ন করেছেন এবং এগুলো একত্রিতভাবে পাওয়া গেলে বুঝতে হবে এসএলইর আক্রান্ত হয়েছে।
এই বৈশিষ্ট গুলো এসএলই আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে কয়েকটি অধিক প্রচলিত বৈশিষ্টের নির্দেশ করে। এসএলইর একটি আনুষ্ঠানিক রোগ নির্ণয়ের জন্য, রোগীকে কোন নির্দিষ্ট সময়ে রোগের শুরুতে কমপক্ষে এই ১১ টি বৈশিষ্টের ৪ টি বৈশিষ্টের থাকতে হবে তবে, দক্ষ ডাক্তারগণ ৪টি বৈশিষ্টের কম লক্ষ্যণ উপস্থিত থাকলেও এসএলই রোগটি সনাক্ত করতে পারেন। লক্ষনগুলো হল:

প্রজাপতির মতো ফোসকা বা র‌্যাশ
এটি গালও নাকের ব্রীজের উপর লাল ফোসকা।

আলোকসংবেদনশীলতা
আলোকসংবেদনশীলতা হল সূর্যের আলোর প্রতি চর্মের অতিমাত্রায় প্রতিক্রিয়া। কাপড় দিয়ে ঢাকা চর্ম সাধারণত: আক্রান্ত হয় না।

ডিসকয়েড লিউপাস
একটি একটি আঁশযুক্ত, উচুঁ, কয়েন/মুদ্রসদৃশ র‌্যাশ যা মুখ, মাথার তক , কান, বুক বা বাহুর উপর দেখা দেয়। এই অঞ্চলগুলো ভাল হয়ে গেলে, ভাল হয়ে যাওয়া জায়গায় ক্ষত বা দাগ থেকে যেতে পারে। অন্যান্য জাতি গোষ্ঠির চেয়ে কৃঞ্চাংগ শিশুর বেলায় ডিসকয়েড লিউপাস বেশি ঘটে।

মিউকোজাল আলসার (মুখের ভিতরে ঘা)
এগুলো ছোট ছোট ক্ষত যা মুখে বা নাকে দেখা যায়। এগুলো সাধারনত ব্যথামুক্ত, তবে নাকের ঘা থেকে রক্তপাত হতে পারে।

আরথ্রাইটিস-গিরায় প্রদাহ
এসএলই আক্রান্ত অধিকাংশ শিশু আরথ্রাইটিসে আক্রান্ত হয়। এর কারণে হাত, কবজি, কনুই, হাই বা বাহুর বা পায়ের অন্যান্য গিরায় ব্যথা হয়। ব্যথা এক স্থান হতে অন্য স্থানে অনুভূত হতে পারে অর্থাৎ এটা এক গিরায় থেকে অন্য গিরায় যেতে পারে এবং শরীরের উভয় অংশের একই গিরায়ও হতে পারে। এসএলইর ক্ষেত্রে আরথ্রাইটিস হলেও এর কারণে কোন স্থায়ী শারীরিক পরিবর্তন (অঙ্গবিকৃতি) সাধারণত হয় না।

প্লুরাইটিস
প্লুরাইটিস হচ্ছে প্লুরাই প্রদাহ। প্লুরাই হচ্ছে ফুসফুসের একটি আবরনী। আর পেরিকারডাইটিস হচ্ছে পেরিকার্ডিয়ামের প্রদাহ। পেরিকার্ডিয়াম হচ্ছে হৃৎপিন্ডের একটি আবরনী। এই সূক্ষ্য টিস্যুগুলোর প্রদাহের কারেণ হৃৎপিন্ড বা ফুসফুসের চারদিকে পানি জমতে পারে। প্লুরাইটিস এর কারণে একটি নির্দিষ্ট ধরনের বুকের ব্যথা অনুভব হয় যা শ্বাসপ্রশাসের সময় জটিল হতে পারে।

কিডনির সংশ্লিষ্টতা বা আক্রমণ
এসএলইতে আক্রান্ত প্রায় সব শিশুই কিডনিতে ও আক্রান্ত হয়ে থাকে এবং এ আক্রমণ মৃদু হতে খুবই মারাত্মক পর্যায়ে পর্যন্ত হতে পারে। শুরুতে, এর কোন লক্ষ্যন বুঝা যায় না এবং শুধুমাত্র প্রস্রাবের পরীক্ষা ও কিডনি সংক্রমনের জন্য রক্ত পরীক্ষা টেস্টের মাধ্যমে ধরা পড়তে পারে। যে সকল শিশুর কিডনি যথেষ্ট পরিমানে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, তাদের প্রস্রাবে প্রোটিন এবং/বা রক্ত থাকতে পারে এবং তাদের পা এবং পায়ের পাতা ফুলে যেতে পারে।

প্রধান স্নায়ুতন্ত্র
প্রধান স্নায়ুতন্ত্র আক্রান্ত হলে এর লক্ষন হিসেবে মাথাব্যথা, খিঁচুনী এবং নিউরোসাইকিয়াট্রিক লক্ষণ যেমন মনোযোগে সমস্যা এবং মনে রাখা, মেজাজের পরিবর্তন, মানসিক চাপ এবং মানসিক রোগ ( একটি মারাত্মক মানসিক অবস্থা যেখানে চিন্তাা ও আচরণ বিঘিœত হয়।)।

রক্তের কোষে অসুবিধা
এই গোলযোগগুলোর কারণ হচ্ছে এন্টিবডি যা রক্তকনিকাকে আক্রান্ত করে। লোহিত রক্ত কনিকা ভেঙ্গে যাওয়ার প্রক্রিয়া (যা শরীরের অন্যান্য অংশ হতে অক্সিজেন সরবরাহ করে) কে বলা হয় হিমুলাইসিস এবং এর ফলে হিমোলাইটিক এনেমিয়া হতে পারে। এই ধ্বংস প্রক্রিযা ধীর হতে পারে এবং তুলানামুলকভাবে মৃদু বা খুব দ্রুত হতে পারে এবং কোন মারাত্মক ঘটনা ঘটতে পারে।
রক্তের শ্বেত কণিকরার সংখ্যা কমে গেলে তাকে বলে লিউকোপেনিয়া এবং এটা সাধারনত এসএলইর ক্ষেত্রে বিপজ্জনক নয়।
রক্তের অণুচক্রিকার সংখ্যা হ্রাস পেলে তাকে বলে থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া যে সব শিশুদের অনুচক্রিকা হ্রাস পায় তাদের চামড়ায় সহজেই কালশিরা পড়তে পারে এবং শরীরে বিভিন্ন অংশে যেমন হজমনালি, মূত্রনালি, ইউটেরাস বা ব্রেইনে রক্ত ক্ষরন হতে পারে।

রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় অসুবিধা
এই গোলযোগগুলো ঘটে রক্তের এন্টিবডির জন্য যা এসএলইর লক্ষণ নির্দেশ ক
ক) এন্টিফসকোলিপিড এন্টিবডির উপস্থিতি (পরিশিষ্ট ১)
(খ) এন্টি-ন্যাটিভ ডিএনএ এন্টিবডিজ (অটোএন্টিবডিজ যা কোষের জেনেরিক উপকরণে পাওয়া যায়)। এগুলো মূলথ: এসএলইতে পাওয়া যায়। এই টেস্টটি প্রায়ই পুনরাবৃত্ত করা হয় কারণ একটি এন্টি-ন্যাটিভ ডিএনএ এন্টিবডিজ এসএলই সক্রিয় থাকলে বৃদ্ধি পায় বলে মনে হয় এবং টেস্টটি চিকিৎসককে রোগের তীব্রতা পরিমাপে সহায়তা করে।
গ) এন্টি-এসএম এন্টিবডিজ: এই নামটি প্রথম রোগীকে (জনাব স্মিথ) নির্দেশ করে যার মধ্যে এগুলো পাওয়া গিয়েছিল। এই এন্টিবডিগুলো একান্তই এসএলইর মধ্যে পাওয়া যায় এবং প্রায়শ: রোগনির্ণয়কে নিশ্চিত করে।

এন্টিনিউক্লিয়ার এন্টিবডিজ (এএনএ)
এগুলো কোষ নিউক্লেই এর বির"দ্ধে পরিচালিত অটোএন্টিবডিসমূহ। এগুলৈা এসএলইতে আক্রান্ত প্রায় প্রত্যেকটি রোগীর মধ্যে পাওয়া যায়। এছাড়া টেস্টটি অন্যান্য রোগীর ক্ষেত্রে ও পজিটিভ হতে পারে এবং শতকারা প্রায় ৫-১৫ টি সুস্থ শিশুর মধ্যে দুর্বলভাবে পজিটিভ হতে পারে।

২.২ টেস্টগুলোর গুরত্ব কী?
ল্যাবরেটরী পরীক্ষা এসএলই রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করে এবং কোন অঙ্গ আক্রান্ত তা সনাক্ত করে। রোগের সক্রিয়তা ও পর্যায় সর্তক করার জন্য এবং ঔষুধের সহনশীলতা নির্ণয়ের জন্য নিয়মিত রক্ত ও প্রস্্রাব পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। কিছু সংখ্যক ল্যাবরেটরী পরীক্ষা দ্বারা এসএলই রোগ নির্ণয় ও কোন ঔষধ প্রয়োজন ও চলমান ঔষধের কার্যকারিতা কতটুকু তা জানা যায়।

নিয়মিত ব্যবহারিক পরীক্ষা : রোগের সক্রিয়তা ও বিভিন্ন অঙ্গের আক্রান্তের অবস্থা জানা যায়।
ইএসআর এবং সি-রিএকটিভ প্রোটিন দুটোই প্রদাহে বাড়তে পারে। সিআরপি স্বাভাবিক থাকতে পারে, এসএলইতে কিন্তু ইএসআর বাড়তে পারে। সিআরপি বাড়লে তা অতিরিক্ত ইনফেকশনের জটিলতা নির্দেশ করে।
রক্ত পরীক্ষায় রক্ত স্বল্পতা, অনুচক্রিকা ও শ্বেতরক্ত কনিকার স্বল্পতা দেখা যায়।
সিরাম প্রোটিন আলেকট্রোফোরেসিস গামা গ্লোবিউলিনের বৃদ্ধি নির্দেশ করে (প্রদাহ বৃদ্ধি ও অটো এন্ডিবডি তৈরী হয়)।
এলবুমিনঃ কম মাত্রা কিডনীর জড়িত হওয়া নির্দেশ করে।
নিয়মিত ল্যাবরেটরী পরীক্ষা কিডনী জড়িত হওয়া নির্দেশ করে (রক্তের ইউরিয়া নাইট্রোজেন ও ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যায় ও ইলেকট্রোলাইটের পরিবর্তন হয়)। যকৃতের কার্যক্ষমতার অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। মাংস পেশীর এনজাইম বৃদ্ধি পায় যদি মাংসপেশী আক্রান্ত হয়।
লিভারের কার্যক্ষমতা ও মাংসপেশীর এনজাইমের পরীক্ষা যদি মাংসপেশী ও যকৃত আক্রান্ত হয় তাহলে এনজাইম গুলো বেড়ে যেতে পারে।
এসএলই রোগ নির্নয়ের সময় এবং ফলো আপের সময় প্র¯্রাব পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিডনী আক্রান্ত কিনা তা জানার জন্য প্র¯্রাব পরীক্ষায় লোহিত রক্ত কনিকার উপস্থিতি ও অতিরিক্ত প্রোটিনের উপস্থিতি কিডনীর প্রদাহ নির্দেশ করে। কখনও কখনও এসএলই আক্রান্ত শিশুদের ২৪ ঘন্টার প্র¯্রাব জমাতে বলা হয়। এভাবে প্রাথমিক পর্যায়ে কিডনীর জড়িত হওয়া নির্ণয় করা যায়।
কমপ্লিমেন্ট লেবেল : কমপ্লিমেন্ট প্রোটিন জন্মগত রোগ প্রতিরোধ কার্যক্রমের অংশ। কিছু কমপ্লিমেন্ট প্রোটিন (সি-৩, সি-৪) রোগ প্রতিরোধ কার্যক্রমের অংশ ব্যবহৃত হয় এবং এর কম মাত্রা রোগের সক্রিয়তা নির্দেশ করে, বিশেষত : কিডনী রোগের)।
বর্তমানে আরো অন্যান্য বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে এসএলই শরীরের বিভিন্ন অংশের আক্রান্ত হওয়া জানা যায়। কিডনী আক্রান্ত হলে কিডনী বায়োপসী (টিস্যু ছোট অংশ কেটে নেওয়া) করা হয়। কিডনী বায়োপরী গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যেমন-ধরন, মাত্রা ও এসএল্টি আক্রান্তের সময় নির্দেশ করে এবং এটা গুরুত্বপূর্ণ সঠিক চিকিৎসার জন্য। ত্বকের বায়োপসী ত্বকের ভাসকুলাইটস, ডিসকয়েড লুপাস ওত্বকের বিভিন্ন র‌্যাশের ধরন নির্নয় করতে পারে। অন্যান্য পরীক্ষা যেমনঃ বুকের এক্সরে (হার্ট ও ফুসফুসের জন্য) ইকোকার্ডিওগ্রাফী, ইলেক্টোকার্ডিওগ্রাফী হার্টের জন্য, পালমোনারী ফাংসন টেস্ট ফুসফুসের জন্য, ইলেকট্রো এনসেফালোগ্রাফী, এম আর ও ব্রেনের বিভিন্ন পরীক্ষা এবং সম্ভাব্য অন্যান্য বায়োপসী নেয়া যেতে পারে শারীরিক বিভিন্ন কোষ থেকে।

২.৩ এটার কী চিকিৎসা আছে? এটা কী ভাল হয়?
বর্তমানে এসএলই প্রতিকার করার জন্য কোন নির্দিষ্ট ঔষধ নাই। এসএলইর চিকিৎসা এসএলইর চিহ্ন ও লক্ষনসমূহ নিয়ন্ত্রনে সহায়তা করে এবং অঙ্গ ও টিস্যুর স্থায়ী ক্ষতি সহ রোগের জটিলতা নিয়ন্ত্রনে সহায়তা করে। প্রথমবার এসএলই রেগা সনাক্ত করার পর, এটা খুবই সক্রিয় থাকে। এই পর্যায়ে, রোগ নিয়ন্ত্রনের ও অঙ্গের ক্ষতি রোধের জন্য অধিক ডোজের ঔষধ প্রয়োজন হয়। অনেক শিশুর ক্ষেত্রে, চিকিৎসার মাধ্যমে এসএলইর তীব্রতা কমে আসে এবং রোগটি নিয়ন্ত্রনের পর্যায়ে যেতে পারে যে অবস্থায় সামান্য ঔষধ প্রয়োজন বা আদৌ কোন ঔষধ প্রয়োজন হয় না।

২.৪ চিকিৎসাগুলো/প্রতিকারগুলো কী কী?
শিশুদের ক্ষেত্রে এসএলইর চিকিৎসার জন্য কোন প্রকার অনুমোদিত ঔষধ নাই। এসএলইর অধিকাংশ লক্ষ্যণগুলো প্রদাহের কারণে এবং বিধায় চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হচ্ছে প্রদাহ হ্রাস করা। এসএলইতে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে পাঁচ ধরনের ঔষধ সারা বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত হয়।

ষ্টেরয়েড বিহীন প্রদাহ বাধা দানকারী ঔষধ (নন-স্টেরয়ডাল এন্টি-ইনফ্লেমেটরী ড্রাগজ)
এনএসএআইডিএস যেমন আইবুপ্র"ফেন বা ন্যাপ্রোক্সিন আরথ্রাইটিস নিয়ন্ত্রনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এগুলো শুধুমাত্র স্বল্পমেয়াদে ব্যবহারের জন্য পরামর্শ দেয়া হয় এবং সেই সাথে গিরার প্রদাহ এর উন্নতির সাথে সাথে ডোজ কমানোর নির্দেশ দেয়া হয়। এই পরিবারের ঔষধের এসপিরিন সহ অনেক ধরনের ড্রাগ রয়েছে। আজকাল, এসপিরিন এর প্রদাহনাশের জন্য খুব কমই ব্যবহৃত হয় তবে, যে সকল শিশুদের উচ্চ পর্যায়ের এন্টিফসকোলিপিড এন্টিবডি রয়েছে তাদের অনাকাংখিত রক্ত জমাট প্রতিরোধে এটি ব্যবহৃত হয়।

ম্যালেরিয়ানাশক ঔষধ
ম্যালেরিয়ানাশক যেমন হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন রোদ সংবেদনশীল চর্মের র‌্যাশ যেমন ডিসকয়েড বা এসএলই র‌্যাশের সাব-একিউট টাইপ এর চিকিৎসায় বা নিয়ন্ত্রনে খুবই কার্যকর। এই ঔষধগুলোর কাজ শুরু করতে অনেকদিন সময় লেগে যেতে পারে। সময় থাকতে ঔষধ নিতে পারলে, এই ঔষধগুলোও রোগের তীব্রতা কমায়, কিডনি রোগ নিয়ন্ত্রনকে উন্নত করে এবং হৃদযন্ত্র ও অন্যান্য অঙ্গকে ক্ষতি হতে রক্ষা করে। এসএলই এবং ম্যালেরিয়ার সাথে কোন সম্পর্ক জানা যায়নি। বরং, এসএলইতে আক্রান্ত ইম্মিউন সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রিত করতে সাহায্য করে যা ম্যালেরিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য ও প্রয়োজন।

কর্টিকসটেরয়েডস
কর্টিকসটেরয়েডস যেমন পেডনিসোন বা প্রেডনিসোলন ইম্মিউন সিস্টেমের প্রদাহ হ্রাসে এবং এর প্রভাব দমনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এগুলোই হচ্ছে এসএলই প্রতিকারের প্রধান দাওয়াই। মৃদু এসএলইতে আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে কর্টিকসটেরয়েডস এর সাথে ম্যালেরিয়ানাশক দিলেই কেবল কাংখিত চিকিৎসা প্রদান করা হলো বলে গণ্য হবে। রোগের অধিক তীব্রতার ক্ষেত্রে যখন কিডনি বা অন্যান্য অভ্যন্তরীন অংগ ও আক্রান্ত হয়, তখন এগুলো ইম্মিউনোসাপ্রেসিভ ড্রাগ (নিচে দেখুন) এর সাথে এগুলো ব্যবহার করা হয় কয়েক সপ্তাহ বা মাস যাবৎ কর্টিকসটেরয়েডস প্রতিদিন ব্যবহার না করলে প্রাথমিক রোগ নিয়ন্ত্রন সম্ভব হয় না এবং অধিকাংশ শিশুর বহু বছর যাবৎ এই ঔষধগুলো প্রয়োজন। কর্টিকসটেরয়েডস এর প্রাথমিক ডোজ ও দৈনিক কতবার ব্যবহার করতে হবে তা রোগের তীব্রতা এবং কোন কোন অংগ আক্রান্ত হয়েছে তার উপর নির্ভর করে। কর্টিকসটেরয়েডস এর উচ্চ ডোজ বা অথবা:শিরায় ব্যবহার মারাত্মক হিমুলাইটিক এনিমিয়া, প্রধান ¯œায়ুতন্ত্রের রোগ এবং কিডনির অধিকতর মারাত্মক ধরনের আক্রমণ প্রতিরোধে গ্রহণ করা হয়। তখন শিশুরা বেশ ভাল বোধ করে এবং কর্টিকসটেরয়েডস ব্যবহারের কয়েকদিনের মধ্যে বাড়তি শক্তি লাভ করে। রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রনের পর, কর্টিকসটেরয়েডস সম্ভব নি¤œতম পর্যায়ে হ্রাস করা হয় যার ফলে শিশুদের মধ্যে একটি ভাললাগা বোধ আসে। কর্টিকসটেরয়েডস এর ডোজ ধীরে ধীরে কমাতে হবে এবং রোগের ক্লিনিক্যাল ও ল্যাবরেটরী পদক্ষেপগুলো দমনের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
কখনো কখনো কিশোররা কর্টিকসটেরয়েডস ব্যবহার বন্ধ করার জন্য প্রলুব্ধ হতে পারে বা তারা এগুলোর ডোজ কমাতে বা বাড়াতে পারে। সম্ভবত: তারা সাইড ইফেক্ট বিষয়ে বিরক্ত বা সম্ভবত তারা আগের চেয়ে ভাল বা মন্দ বোধ করতে পারে। কর্টিকসটেরয়েডস কিভাবে কাজ করে এবং কোন প্রকার তত্তবধান ছাড়া কর্টিকসটেরয়েডস বন্ধ করে দেয়া কেন বিপজ্জনক এটা শিশু এবং পিতামাতাগণের বুঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কতিপয় কর্টিকসটেরয়েডস (কর্টিসোন) শরীরে সাভাবিক প্রক্রিয়াই তৈরি হয়। চিকিৎসা শুরু করা হলে, শরীরের নিজের মধ্যে কর্টিসোন তৈরি বন্ধ হয়ে যায় এবং এটা এড্রেনাল গ্রন্থি তা ধীর ও অলস হয়ে যায়।
যদি কর্টিকসটেরয়েডস দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহার করা হয় এবং এরপর হঠাৎ করে বন্ধ করে দেয়া হয়, তাহলে দেহ কিছু সময়ের জন্য যথেষ্ট কর্টিসোন তৈরি করতে সক্ষম না ও হতে পারে। এর ফল হতে পারে কর্টিসোনের ঘাটতি (এড্রেনালের ঘাটতি) যা জীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ। এছাড়াও, তাড়াহুড়া করে কর্টিকসটেরয়েডস এর ডোজ কমালে তা রোগের তীব্রতা বৃদ্ধি করে দিতে পারে।

নন-বায়োলজিক্যাল ডিজিজ মডিফায়িং ড্রাগ (ডিএমএআরডিএস)
এই ঔষধগুলোর মধ্যে আছে এজাথিওপ্রাইন, মেথোট্রিক্স্যাট, মাইকোফেনোল্যাট মোফেটিল এবং সাইক্লোফসফোমাইড। এগুলো কর্টিকসটেরয়েডস ড্রাগ হতে ভিন্ন উপায়ে কাজ করে এবং প্রদাহ দমন করে। এই ঔষধগুলো কর্টিকসটেরয়েডস যখন একা এসএলই নিয়ন্ত্রন করতে না পারে তখন কাজ করে এবং চিকিৎসকদের কর্টিকসটেরয়েডস এর প্রাত্যাহিক ডোজ হ্রাস করতে সাহায্য করে যাতে এসএলই এর লক্ষনগুলো নিয়ন্ত্রনের সময় এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হ্রাস পায়।
এই ঔষধগুলোর মধ্যে আছে এজাথিওপ্রাইন, মেথোট্রিক্স্যাট, মাইকোফেনোল্যাট মোফেটিল এবং সাইক্লোফসফোমাইড। এগুলো কর্টিকসটেরয়েডস ড্রাগ হতে ভিন্ন উপায়ে কাজ করে এবং প্রদাহ দমন করে। এই ঔষধগুলো কর্টিকসটেরয়েডস যখন একা এসএলই নিয়ন্ত্রন করতে না পারে তখন কাজ করে এবং চিকিৎসকদের কর্টিকসটেরয়েডস এর প্রাত্যাহিক ডোজ হ্রাস করতে সাহায্য করে যাতে এসএলই এর লক্ষনগুলো নিয়ন্ত্রনের সময় এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হ্রাস পায়।

বায়োলজিকাল ডিএমএআরডিএস
জৈবিক ডিএমএআরডিএস (প্রায়শ: শুধুমাত্র বায়োলজিক্স বলা হয়) এর মধ্যে রয়েছে অটোএন্টিবডিজ উৎপাদনে বাধা প্রদান বা একটি নির্দিষ্ট অণুর প্রভাব। এই ঔষধগুলোর একটি হচ্ছে রিটুক্সিম্যাব যা মূলত: যখন সাধারণ চিকিৎসা রোগটি নিয়ন্ত্রনে ব্যর্থ হয় তখন ব্যবহার করা হয়। বেলিমুম্যাব একটি বাইওলজিক ড্রাগ যা যা রক্তের বি সেলের এন্টিবডি উৎপাদনকারী টাইপ এর বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা হয় এবং বয়স্ক এসএলই রোগীদের চিকিৎসায় এটার ব্যবহার অনুমোদন করা হয়। সাধারনত: এসএলই আক্রান্ত শিশু ও কিশোরদের মধ্যে এই ঔষধের ব্যবহার এখনো পরীক্ষা নীরিক্ষার বিষয়।
অটোইম্মিউন রোগের ক্ষেত্রে এবং বিশেষ করে এসএলইর ক্ষেত্রে গবেষণা খুব বেশি মাত্রায়ই হচ্ছে। ভবিষ্যৎ লক্ষ্য হচ্ছে প্রদাহ ও অটোইম্মিউনিটির বিশেষ কৌশল নির্ধারণ করা যাতে করে সম্পূর্ণ ইম্মিউন সিস্টেমকে দমন না করে চিকিৎসা পদ্ধতি আরো উন্নত করা। বর্তমানে, এসএলই বিষয়ে অনেক ক্লিনিক্যাল গবেষণা চলছে। এগুলোর মধ্যে আছে শৈশবকালীন এসএলইর বিভিন্ন দিকগুলোকে উপলব্ধির ক্ষেত্রে বাড়াতে নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি ও গবেষণা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা। এই সক্রিয় চলমান গবেষণা এসএলইতে আক্রান্ত শিশুদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করবে।

২.৫ ড্রাগ থেরাপির সাইড ইফেক্টগুলো কী কী?
এসএলই রোগের প্রতিকার হিসেবে যে ঔষধগুলো ব্যবহৃত হয় সেগুলো এর চিহ্ন ও লক্ষণগুলোর চিকিৎসায় উপকারী। সকল ঔষধের মতো এগুলোর কারণে বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। ( সাইড ইফেক্টের বিস্তারিত জানতে ড্রাগ থেরাপির উপর আলোচিত অংশ দেখুন)।

ষ্টেরয়েড বিহীনব প্রদাহ বাধা দানকারী ঔষধ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে যেমন পাকস্থলিতে অস্বস্তি বোধ করা (এগুলো খাবারের পর গ্রহণ করা উচিত)।, সহজেই কালশিরা পড়া এবং খুব কম ক্ষেত্রে কিডনি বা লিভারে পরিবর্তন)। এন্টিম্যালেরিয়াল ড্রাগ চোখের রেটিনায় পরিবর্তন আনতে পারে এবং এর কারণে রোগীদের কোন চোখের রোগ বিশেষজ্ঞের নিকট নিয়মিত পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

কর্টিকসটেরয়েডস স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে বিভিন্ন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুকি কর্টিকসটেরয়েডস এর উচ্চ ডোজ প্রয়োজন হলে এবং এগুলো বাড়তি মেয়াদে ব্যবহার করা হলে বেড়ে যায়। এগুলোর প্রধান সাইডইফেক্টগুলোর মধ্যে আছে:
শারীরিক পরিবর্তন যেমন ওজন বৃদ্ধি, স্ফিত গাল, দেহের লোমের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, গোলাপি রেখাসহ স্কিনের পরিবর্তন, ব্রণ ও সহজে কালশিরা পড়া)। কম ক্যালরীসম্পন্ন খাবার ও ব্যায়াম দ্বারা ওজন বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রন করা যায়।
সংক্রমণের বর্ধিত ঝুকি বিশেষকরে যক্ষা ও জলবসন্ত। কর্টিকসটেরয়েডস সেবনকারী যে শিশু জলবসন্তে আক্রান্ত হয়েছে তাকে যত দ্রত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন করা উচিত। জলবসন্তের বির"দ্ধে আশু ব্যবস্থা সঠিক আগে থেকে ঠিক করা এন্টিবডি (নিষ্ক্রিয় রোগপ্রতিরোধ) প্রদানের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রন করা যায়।
পাকস্থলীর সমস্যা যেমন ডিসপেপসিয়া (ক্ষুধামন্দা) বা বুকজ্বালা। এই সমস্যাটির জন্য এন্টি আলসার ঔষধ প্রয়োজন হতে পারে।
বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হওয়া।
অপেক্ষাকৃত কম দেখা দেয় যে সাইডইফেক্টগুলো সেগুলো হল:
উচ্চ রক্তচাপ।
পেশির দুর্বলতা, (সিড়ি বেয়ে উঠতে বা চেয়ার থেকে উপরে উঠতে শিশুদের কষ্ট বোধ হতে পারে)।
গ্লুকোজ মেটাবলিজম, বিশেষ করে যদি ডায়াবেটিসের জেনেটিক প্রবণতা থাকে।
মেজাজগত পরিবর্তন যাতে বুঝা মানসিক চাপ ও মেজাজ উঠানামার ইঙ্গিত বহন করে।
চোখের সমস্যা যেমন চোখের লেনসের ঘোলা হয়ে যাওয়া (ছানি) এবং গ্লুকোমা।
হাড় পাতলা হয়ে যাওয়া (অস্টিওপোরোসিস)। এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ব্যায়াম, ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ ও বাড়তি ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি গ্রহণের দ্বারা হ্রাস করা যায়। এই প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপগুলো কর্টিকসটেরয়েডস এর উচ্চ মাত্রা সেবন শুরু সাথে সাথে আরম্ভ করা উচিত।
অধিকাংশ কর্টিকসটেরয়েডস এর সাইড ইফেক্টগুলো আবার দেখা দিতে পারে এবং ডোজ কমালে বা বন্ধ করে দিলে সেগুলো আর থাকবে না।
ডিএমএআরডিএস (বাইওলজিক বা নন-বাইওলজিক) এরও সাইড ইফেক্ট রয়েছে যেগুলো মারাত্মক হতে পারে।

২.৬ কতদিন ধরে চিকিৎসা নেয়া উচিত?
যতদিন রোগ থাকে ততদিনই চিকিৎসা নিতে হবে। এই ব্যাপারে চিকিৎসকরা একমত যে, এসএলই আক্রান্ত অধিকাংশ শিশুকে কর্টিকসটেরয়েড জাতীয় ঔষধ ব্যবহার হতে অনেক কষ্টে প্রত্যাহার করা হয়। এমনটিক কর্টিকসটেরয়েডস এর কম ডোজের একটি দীর্ঘমেয়াদী সংরক্ষণমূলক চিকিৎস রোগের তীব্রতার ঝোক কমাতে পারে এবং রোগকে নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারে। অনেক রোগীর জন্য, এটা রোগের তীব্রতা কমানোর ক্ষেত্রে সর্বোত্তম সমাধান হতে পারে। এরূপ কর্টিকসটেরয়েডস এর নি¤œ ডোজ এর খুব সামান্য ও মৃদু সাইড ইফেক্ট রয়েছে।

২.৭ অপ্রচলিত/সম্পূরক চিকিৎসার নেয়াটা কেমন?
অনেক সম্পূরক ও বিকল্প চিকিৎসা রয়েছে এবং এটা রোগী ও তার পরিবারের জন্য বিভ্রান্তিকর হতে পারে। এই থেরাপিগুলো নেয়ার পূর্বে ঝুঁকি ও সুবিধার কথাটি বিবেচনা করলে দেখা যায় প্রমানিত সুবিধা তেমন নেই এবং সেগুলো সময় ও শিশুর পক্ষে সহ্য করা ও অর্থের বিবেচনায় কঠিন। আপনি যদি সম্পূরক ও বিকল্প থেরাপির কথা বিবেচনা করেন, দয়া করে এই অপশনগুলো আপনার শিশু বাতরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে আলোচনা করে নিন। কতক থেরাপি প্রচলিত চিকিৎসার সাথে সাংঘর্ষিক হতে পারে। অধিকাংশ চিকিৎসক তাদের পরামর্শ অনুসরণ করলে এগুলো ব্যবহারে আপনাকে নিষেধ করবে না। ডাক্তারের পরামর্শ হিসেবে দেয়া ঔষধ হঠাৎ বন্ধ করা ঠিক নয়। যখন রোগ নিয়ন্ত্রনের জন্য ঔষধের দরকার, তখন রোগ বিদ্যমান থাকতে ঔষধ বন্ধ করা খুবই বিপজ্জনক। দয়া করে ঔষধ বিষয়ে আপনার উদ্বেগ আপনার শিশুর ডাক্তারের সংগে পরামর্শ কর"ন।

২.৮ কী কী চেক-আপ নিয়মিত মেয়াদে গ্রহণ করতে হবে?
ঘন ঘন চিকিৎসকের নিকট আসতে হবে কেননা এসএলইর অনেকগুলো ব্যাপার রয়েছে যেগুলো আগে থেকে সনাক্ত করতে পারলে প্রতিরোধ বা প্রতিকার করা যায়। সাধারনভাবে, এসএলই আক্রান্ত শিশুদের প্রতি ৩ মাস অন্তর অন্তর একবার বাত বিশেষজ্ঞের নিকট দেখানো উচিত। প্রয়োজন হলে, অন্যান্য বিশেষজ্ঞের যেমন শিশু চর্ম (ত্বকের যতœ), শিশু রক্তরোগ, (শিশু কিডনী (বিশেষজ্ঞ) সাথেও পরামর্শ করতে পারবেন। এসএলই আক্রান্ত শিশুর যতেœ সমাজকর্মী, মনোবিজ্ঞানী, পুষ্টিবিদ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক পেশা জীবিগণও জড়িত।
এসএলই আক্রান্ত শিশুদের নিয়মিত রক্তচাপ, প্রস্বাব পরীক্ষা, রক্ত পরীক্ষা, রক্তের গ্লুকোজ, কোয়াগুলেশন টেস্ট এবং সম্পূরক ও এন্টি-ন্যাটিভ ডিএনএ এন্টিবডি লেভেল টেস্ট করতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ভিত্তিক ব্লাডটেস্টগুলো চিকিৎসার পুরো মেয়াদে দরকার যাতে এটা নিশ্চিত করা যায় যে, রোগের চিকিৎসা ঔষধের প্রভাব যেন অস্থিম"জ্জায় উৎপন্ন রক্ত কনিকাগুলো বেশী মাত্রায় প্রভাব না ফেলে।

২.৯ রোগটি কতদিন থাকে?
যেমনটি উপরে উল্লেখ করা হয়েছে, এসএলইর নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা নেই। এসএলইর চিহ্ন ও লক্ষ্যণগুলো নিয়মিতভাবেও শিশু রিউমাটলজিস্টের পরামর্শমতো ঔষধ সেবন করলে ন্যূনতম বা সম্পূর্ণ ভাবে চলে যেতে পারে। অন্যান্য নিয়ামকগুলোর মধ্যে, নিয়মিত ঔষধ না খাওয়া, সংক্রমণ, মানসিক চাপ, সূর্যালোক এসএলইর মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। এই মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়াকে লিউপাস ফ্লেয়ার বলে। রোগ কোন দিকে মোড় নিবে এটা ভবিষ্যদ্বাণী করা প্রায়শ কঠিন হয়ে পড়ে।

২.১০ রোগের দীর্ঘ মেয়াদী বিন্তার (ভবিষ্যদ্বাণী) কী?
এসএলইর পরিণতি প্রারম্ভিক ও দীর্ঘায়িত রোগ নিয়ন্ত্রণ এর সাথে সাথে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন, কর্টিকসটেরয়েডস এবং ডিএমএআরডিএস এর প্রভাবে নাটকীয়ভাবে উন্নতি লাভ করতে থাকে। শৈশবকালে এসএলইতে আক্রান্ত হয়েছেন এমন অনেক রোগী অনেক ভাল ভাবে নিয়ন্ত্রন হয়ে থাকে। তথাপি, রোগটি মারাত্মক ও জীবনের প্রতি হুমকি স্বরূপ হতে পারে এবং কৈশোর ও যৌবনের পুরো সময়টা সক্রিয় থাকতে পারে।
শিশুকালে এসএলইর ভবিষ্যদ্বাণী অভ্যন্তরীণ অংগগুলোর আক্রান্ত হওয়ার উপর নির্ভর করে। যে সকল শিশুরা উল্লেখযোগ্যভাবে কিডনি বা কেন্দ্রীয় নার্ভাস সিস্টেম রোগে আক্রান্ত হয়েছে তাদের জন্য তীব্র কার্যকরী ঔষধ দেয়া যেতে পারে। অপরপক্ষে, মৃদু র‌্যাশ ও গিড়ার প্রদাহ সহজেই নিয়ন্ত্রনযোগ্য। তবে, কোন শিশু সম্পকেশিশুকালে এসএলইর ভবিষ্যদ্বাণী অভ্যন্তরীণ অংগগুলোর আক্রান্ত হওয়ার উপর নির্ভর করে। যে সকল শিশুরা উল্লেখযোগ্যভাবে কিডনি বা কেন্দ্রীয় নার্ভাস সিস্টেম রোগে আক্রান্ত হয়েছে তাদের জন্য তীব্র কার্যকরী ঔষধ দেয়া যেতে পারে। অপরপক্ষে, মৃদু র‌্যাশ ও গিড়ার প্রদাহ সহজেই নিয়ন্ত্রনযোগ্য। তবে, কোন শিশু সম্পর্কে ভবিষ্য বাণী তুলনামূলকভাবে কঠিন। ভবিষ্য বাণী তুলনামূলকভাবে কঠিন।

২.১১ সম্পূর্ণভাবে আরোগ্যলাভ কি সম্ভব?
শুরুতেই যদি রোগকে প্রথমিক অবস্থায় সনাক্ত করা যায় এবং সঠিক চিকিৎসা নেয়া যায় তাহলে অধিকাংশ রোগ সেরে যায় এবং রোগ নিয়ন্ত্রন বা নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে ( অর্থাৎ এসএলই সকল চিহ্ন ও লক্ষণগুলো অনুপস্থিত থাকে)। তবে, যেমনটি উপরে উল্লেখ করা হয়েছে, এসএলই একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ যার সম্পর্কে কোন ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় না এবং যে সকল শিশুর এই রোগ সনাক্ত করা হয়েছে তাদের সার্বক্ষনিক চিকিৎসা নিতে হয়। প্রায়ই, একজন প্রাপ্ত বয়স্ক বিশেষজ্ঞকে এসএলই রোগী প্রাপ্ত বয়স্কে উপনীত হওয়ার সময় পর্যবেক্ষণ করতে হবে।


৩. প্রাত্যাহিক জীবনযাপন

৩.১ শিশুর ও পরিবারের প্রাত্যাহিক জীবণে রোগটি কিরকম প্রভাব ফেলতে পারে?
এসএলই আক্রান্ত শিশুর একবার চিকিৎসা করা হলে, তারা একটি স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে। একটি ব্যতিক্রম হলো অতিরিক্ত সূর্যালোকে/অতি বেগুনী আলোর সংস্পর্শে আসা যাতে এসএলই তীব্রতা বাড়তে পারে। এসএলই আক্রান্ত কোন শিশুর সারাদিন বীচে ঘোরা উচিত নয় বা পুকুরের পাশে সূর্যালোকে থাকা উচিত নয়। নিয়মিত এসপিএফ ৪০ বা তার বেশি সানস্ক্রিনে থাকা বাধ্যতামূলক। ১০ বছর বয়সের শিশুর তাদের ঔষধ সেবন করা ও ব্যক্তিগত যতœ সম্পর্কে পরিকল্পনা করা খুবই জরুরী। শিশুও তাদের পিতামাতার উচিত এসএলইর লক্ষণগুলো সম্পর্কে সচেতন হওয়া যাতে সম্ভাব্য তীব্রতা সনাক্ত করা যায়। কতক লক্ষ্যণ যেমন দীর্ঘমেয়াদী অবসাদ এবং চলাফেরার শক্তির অভাব কোন রোগের তীব্রতা হ্রাস পেলেও কয়েকমাস ধরে থাকতে পারে। একটি স্বাস্থ্যসম্মত ওজন, হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে ও নিয়ন্ত্রিত অবস্থানে থাকতে নিয়মিত ব্যায়াম অপরিহার্য।

৩.২ স্কুলে যাওয়া সংক্রান্ত
এসএলই আক্রান্ত শিশুরা রোগটি মারাত্মক সক্রিয় অবস্থায় থাকা ব্যতীত অন্য সময় স্কুলে যেতে পারে। কোন কেন্দ্রীয় ¯œায়ু তন্ত্র আক্রান্ত না হলে এসএলই সাধারনভাবে শেখা ও চিন্তা করার ক্ষেত্রে শিশুর ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে না। কেন্দ্রীয় য়ু তন্ত্র আক্রান্ত হলে মনোযোগে ও স্মরণ করতে সমস্যা, মাথাব্যথা, মেজাজের পরিবর্তন ইত্যাদি ঘটতে পারে। এই সকল ক্ষেত্রে, শিক্ষার পরিকল্পনা নতুনভাবে প্রণয়ন করতে হবে। সার্বিকভাবে, শিশুকে রোগ যতটা অনুমিত দেয়া সেই হিসেবে পাঠক্রমবহির্ভূত কাজে অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করা উচিত।তবে, শিক্ষককে শিশুর এসএলই রোগে আক্রান্ত হওয়া বিষয়ে অবহহিত করতে হবে যাতে এসএলই সংশ্লিষ্ট সমস্যা যেমন শিক্ষা বিঘœকারী জয়েন্ট ও অন্যান্য দৈহিক ব্যথা নিয়ন্ত্রনে শিশুকে সহযোগিতা প্রদান করা যায়।

৩.৩ খেলাধুলা সম্পর্কে ?
সাধারন কর্মকান্ডের উপর নিয়ন্ত্রন অপ্রয়োজনীয় ও অনাকাংখিত। রোগের সুপ্ত পর্যায়ে শিশুকে নিয়মিত ব্যায়াম গ্রহনে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। হাঁটা, সাতারকাটা, সাইকেল চালানো ও অন্যান্য এরোবিক বা আউটডোর কর্মকান্ডের ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। উপযুক্ত সূর্যের আলো প্রতিরোধকারী পোষাক লাইট স্পেকট্রাম প্রটেকশন সানস্ক্রিন এবং ব্যস্ততম সময়ে সূর্যালোকের সংস্পর্শে না যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ক্লান্তিকর ব্যায়াম এড়িয়ে চলা উচিত। রোগের তীব্রতাকালে, ব্যায়াম পরিমিত করা উচিত।

৩.৪ ডায়েট সংক্রান্ত ?
এসএলই প্রতিকারের জন্য কোন নির্দিষ্ট ডায়েট নাই। এসএলই আক্রান্ত শিশুদের উচিত একটি স্বাস্থ্যসম্মত সুষম ডায়েট মেনে চলা। যদি তারা কর্টিকসটেরয়েড গ্রহণ করে, তবে উচ্চ রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রনের জন্য তাদের উচিত খাবারে কম লবণ খাওয়া এবং ডায়াবেটিস ও ওজন বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রনের জন্য তাদের উচিত কম চিনি বা চিনিযুক্ত খাবার খাওয়া। তাছাড়া, তাদের উচিত ওস্টিওপরোসিস রোধে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া। অন্য কোন ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট এসএলই প্রতিরোধে সহায়ক বলে বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রমাণিত নয়।

৩.৫ আবহাওয়া কি রোগের গতিবিধিকে প্রভাবিত করতে পারবে?
এটা ভাল ভাবে জানা যে সূর্যলোকের সংস্পর্শে এসে এই রোগের চামড়ার প্রদাহ এবং নতুন করে রোগটি আবার জেগে উঠতে পারে। এজন্য এর প্রতিকারে সূর্যালোক প্রতিরোধকারী লোশন শরীরের চামড়ার বডির বাইরে থাকলে শিশুটিকে অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। মনে রাখতে হবে যে বাহিরে যাবার ৩০ মিনিট আগেই এই লোশন লাগাতে হবে যাতে এটা ত্বকের প্রবেশ করতে পারে এবং ত্বকটাও শুস্ক হয়ে যায়। রোদ ঝলমলে দিনে এই লোশন ৩ ঘন্টা পর পর লাগাতে হবে। এই লোশনটি পানি প্রতিরোধ সক্ষম হলেও গোসল ও সাঁতারের পরে পুনরায় লাগাতে বলা হয়েছে। এছাড়া সূর্যলোক প্রতিরোধকারী ফুল হাতা জামা এবং মাথার টুপি পরিধান করতে হবে এমনকি মেঘলা দিনে এই পোষাকের নিয়ম মেনে চলতে হবে। কিছু কিছু শিশুদের ফ্লোরোসেন্ট বাতি, হ্যালোজন বাতি এমনকি কম্পিউটারের মনিটরে থেকে অতি বেগুনি রশ্নির প্রভাব পড়তে দেখা যায়। এক্ষেত্রে কম্পিউটারে অতি বেগুনি রশ্নি প্রতিরোধক পর্দা ব্যবহার করা যেতে পারে।

শিশুদের কি টিকা দেয়া যাবে ?
এসএলই আক্রান্ত শিশুদের জীবানু দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। সেহেতু টিকার মাধ্যমে জীবানু দ্বারা আক্রান্ত রোগ থেকে প্রতিরোধ করা গুরুত্বপূর্ণ। যদি সম্ভব হয় টিকার নিয়মিত সূচী অনুযায়ী টিকা দিতে হবে। কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম যে সমস্ত শিশু সক্রিয় রোগে ও বেশী পরিমানে আক্রান্ত ও যারা ইমিউনো সারপ্রেসিড চিকিৎসা নিচ্ছে, বেশী মাত্রার কর্টিকোস্টেরয়ড এবং বায়োলজীক্যাল এজেন্ট নিচ্ছে তারা কোন লাইভ ভাইরাস টিকা যেমন হাম, মামস, রুবেলা টিকা, মুখের খাওয়া পোলিও টিকা ও চিকেন পক্স টিকা)। মুখের খাওয়ার পোলিও টিকা পরিবারের অন্য সদস্যদের যারা একই বাসায় থাকা শিশু যারা ইউনোসারপ্রেসিভ ঔষধ নিচ্ছে তাদেরও দেয়া যাবে না। প্রিউমোকক্কাল, মেনিনগোকক্কাল এবং বাৎসরিক ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন যে সকল শিশুদের এসএলই রয়েছে এবং উচ্চ মাত্রার কর্টিসকসটেরয়েডস এবং/বা ইম্মিউনোসাপ্রেসিভ ড্রাগ নিচ্ছে তাদের জন্য সুপারিশ করা হয়। এসএলইতে আক্রান্ত কিশোর মেয়ে ও ছেলেদের জন্য এইচপিভি সহ ভ্যাকসিন সুপারিশ করা হয়।
লক্ষণীয় যে, এসএলইতে আক্রান্ত শিশুদের তাদের বন্ধুদের তুলনায় বেশি ভ্যাকসিন প্রযোজন হতে পারে কারণ এসএলইতে আক্রান্ত হলে এসব টিকাগুলোর কার্যকারিতা স্বল্প দিন স্থায়ী হয়।

৩.৭ যৌন জীবন, গর্ভাবস্থা ও জন্মনিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিষয়:
সএলইতে আক্রান্ত কিশোরগণ একটি কাংখিত যৌন জীবন যাপন করতে পারবেন। তবে, যৌনকর্মে সক্রিয় কিশোরগণকে যদি ডিএমএআরডিএস বা কোন সক্রিয় রোগ দ্বারা চিকিৎসা করা হয় তাদেরকে অবশ্যই নিরাপদ গর্ভাবস্থা পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। আদর্শগতভাবে, গর্ভধারণ পরিকল্পিত হওয়া উচিত। এসএলইতে আক্রান্ত অধিকাংশ মহিলাগণ নিরাপদে গর্ভধারণ ও একটি স্বাস্থ্যসম্মত শিশুর অধিকারী হতে পারেন। গর্ভাবস্থার আদর্শ সময় হচ্ছে যখন রোগটি বিশেষ করে কিডনির আক্রমণ যথেষ্ট পরিমানে দীর্ঘসময় ধরে নিয়ন্ত্রন করা গিয়েছে। এসএলইতে আক্রান্ত মহিলাগণের এসএলই রোগের কারণে বা ঔষধ গ্রহণ করার কারণে সমস্যা বোধ করে থাকেন। এসএলইর কারণে গর্ভপাতের, অকাল সন্তান জন্মদান এবং জন্মকালে অস্বাভাবাবিকতার উচ্চ ঝুকি থাকে। শিশুর এই অস্বাভাবিকতা নিয়ে জন্মগ্রহণকে নিউন্যাটাল লিউপাস (পরিশিষ্ট-২) বলে। অত্যধিক এন্টিফসফলিপিড এন্টিবডিতে (পরিশিষ্ট ১) রয়েছে এমন মহিলাগণের সমস্যাপূণ্য গর্ভধারণের ঝুকি অত্যধিক।
গর্ভাবস্থা স্বয়ং এসএলইর তীব্রতার লক্ষণ জন্ম দিতে বা এর তীব্রতা বৃদ্ধিতে অবদান রাখে। কাজেই, একজন ধাত্রী যার উচ্চ ঝুকির গর্ভাবস্থার অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং যিনি বাত বিশেষজ্ঞের সাথে ঘনিষ্টভাবে কাজ করেন, তাকে অবশ্যই এসএলইতে আক্রান্ত গর্ভবতী মহিলাকে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।
এসএলই রোগীদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ধরনের জন্মনিরোধক হচ্ছে বাধা পদ্ধতি (কনডম বা ডায়াফ্রাম) এবং স্পার্মিসাইডাল এজেন্ট। প্রজেস্টেরোন-ওয়ানলি সিস্টেমেটিক কনট্রাসেপটিভ ও গ্রহণযোগ্য যেমন করে গ্রহণযোগ্য কিছু ইনট্রোটারাইন ডিভাইস (আইইউডিএস)। এস্ট্রোজেন সমৃদ্ধ জন্মনিরোধক পিল এসএলইতে আক্রান্ত মহিলাদের রোগের তীব্রতা বৃদ্ধি করতে পারে, যদিও ঝুকি হ্রাসের জন্য নতুন নতুন ব্যবস্থাও সহজলভ্য হচ্ছে।


৪. পরিশিষ্ট ১। এন্টিফসফলিপিড এন্টিবডিজ

এন্টিফসফলিপিড এন্টিবডিজ হচ্ছে সেই ধরনের এন্টিবডিজ যা দেহের নিজস্ব ফসফিলিপিড (কোন কোষের মেম্ব্রেনের অংশ) বা প্রোটিন যা ফসফলিপিড এর সংগে যুক্ত থাকে। তিনটি সুবিদিত এন্টিফসফলিপিড এন্টিবডি হচ্ছে এন্টিকার্ডিওলিপিন এন্টিবডিজ, বিটা-২ গ্লাইকো প্রোটিন ১এর বিরুদ্ধে এন্টিবডিজ এবং লিউপাস এন্টিকোয়াগুলেন্ট। এন্টিফসফলিপিড এন্টিবডি এসএলইতে আক্রান্ত ৫০% শিশুদের মধ্যে পাওয়া যায়, কিন্তু সেগুলো অন্যান্য কিছু অটোইম্মিউন রোগ, বিভিন্ন সংক্রমণ এবং অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে একটি নগন্য শতকরায় পাওয়া যায়।
এই এন্টিবডিগুলো রক্তনালিকার মধ্যে জমাট বাধার প্রবণতা বৃদ্ধি করে এবং এগুলো ধমণীর এবং/বা শিরার থ্রম্বসিস, অস্বাভাবিকভাবে কম অনুচক্রিকা (থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া), মাইগ্রেণ জাতীয় মাথাব্যথা, মৃগীরোগ এবং স্কিনের গোলাপী দাগের বিস্তারসহ রংহীন হওয়া সহ অনেকগুলো রোগের কারণ হিসেবে কাজ করে। রক্ত জমাটের একটি প্রচলিত জায়গাা হচ্ছে ব্রেইন যার ফলে স্ট্রোক হতে পারে। রক্ত জমাটের অন্যান্য প্রচলিত জায়গা হচ্ছে শিরা ও কিডনি। এন্টিফসফলিপিড সিন্ড্রোম হচ্ছে কোন রোগকে দেয়া নাম যখন একটি পজিটিভ এন্টিফসফলিপিড এন্টিবডি টেস্টের মাধ্যমে থ্রম্বসিসের আক্রমণ ঘটেছে।
এন্টিফসফলিপিড এন্টিবডিজ গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে গুর"ত্বপূর্ণ কেননা এগুলো গর্ভাশয়ের ফুলের কার্যকারিতায় হস্তক্ষেপ করে। ফুলের নালিকায় যে রক্ত জমাট বাধে তার কারণে অকালে গর্ভপাত, ভ্র"ণের অপ্রত্যাশিত বৃদ্ধি, প্রি-এক্লাম্পসিয়া (গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ) এবং মৃত শিশুর জন্ম্ ইত্যাদি হতে পারে। এন্টিফসফলিপিড এন্টিবডি রয়েছে এমন কিছু মহিলার গর্ভধারন করতে ও সমস্যা হতে পারে।
এন্টিফসফলিপিড এন্টিবডি টেস্টে যে সকল শিশুর ক্ষেত্রে পজিটিভ রিজাল্ট পাওয়া গিয়েছে, তাদের কখনোই থ্রম্বসিস হয়নি। এরূপ শিশুর সবচেয়ে ভাল প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা কী হতে পারে সেই বিষয়ে গবেষণা চলছে। বর্তমানে, এন্টিফসফলিপিড এন্টিবডি টেস্টে যে সকল শিশুর ক্ষেত্রে পজিটিভ রিজাল্ট পাওয়া গিয়েছে এবং যাদের সুপ্তভাবে অটোইম্মিউন রোগ আছে, তাদেরকে কম ডোজের এসপিরিন দেয়া হয়। এসপিরিন অনুচক্রিকার আঠালোভাব হ্রাসে কাজ করে এবং এই কারণে রক্ত জমাট বাধার ক্ষমতাকে ও হ্রাস করে। এন্টিফসফলিপিড এন্টিবডি রয়েছে এরূপ কিশোরদের প্রত্যাশিত নিয়ন্ত্রন বলতে ঝুকির নিয়ামকগুলো যেমন ধুমপান ও জন্মনিরোধ এড়িয়ে চলা ইত্যাদি।
এন্টিফসফলিপিড সিন্ড্রোমের (শিশুদের ক্ষেত্রে থ্রম্বসিসের পর) রোগ নির্ণয় নিশ্চিত হলে, প্রাথমিক চিকিৎসা হচ্ছে রক্তকে পাতলা করা। এই পাতলা করার কাজটি ওয়ারফারিন নামে একটি ট্যাবলেট দিয়ে করা হয়। এটি একটি রক্ত জমাট বাধাদানকারী ঔষধ। এই ঔষধটি দৈনিক নিতে হয় এবং ট্যাবলেটটি যে কাংখিত মাত্রায় রক্তকে পাতলা করছে তা নিশ্চিত করার জন্য নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করতে হয়। হেপারিন নামের ইনজেকশন ও রয়েছে যা চামড়ার নিচে দিতে হয়। আর রয়েছে এসপিরিন। এটি একটি রক্ত জমাট বাধাদানকারী থেরাপি অনেকাংশে রোগের তীব্রতা এবং রক্ত জমাটের ধরনের উপর নির্ভর করে।
এন্টিফসফলিপিড এন্টিবডিজ রয়েছে এমন মহিলাগণ যাদে ঘন ঘন গর্ভপাত হয় তাদের ও চিকিৎসা আছে, কিন্তু সেটা ওয়ারফারিন নয়, কেননা এটা গর্ভাবস্থায় দেয়া হলে ভ্র"নের অস্বাভাবিকতা ঘটাতে পারে। এসপিরিন ও হেপারিন এন্টিফসফলিপিড এন্টিবডিজ রয়েছে এমন গর্ভবতী মহিলার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। গর্ভাবস্থায়, হেপারিন চামড়ার নিচে ইনজেকশন হিসেবে দেয়া হয়। এরূপ ঔষধ ব্যবহার ও ধাত্রীর সতর্ক তত্তাবধান নিশ্চিত করা গেলে, প্রায় ৮০% মহিলা সফলভাবে গর্ভধারণ করতে পারবেন।

৫। পরিশিষ্ট ২, নিউন্যাটাল (নবজাতক)এর লিউপাস

নিউন্যাটাল লিউপাস ভ্র"ণ ও নবজাতকের একটি বিরল রোগ যা সুনির্দিষ্ট অটোএন্টিবডিজের গর্ভফুল হয়ে জরায়ু দিয়ে বিস্তৃতি লাভ করে। নিউন্যাটাল লিউপাস এর সাথে সংশ্লিষ্ট সুনির্দিষ্ট এন্টিবডিগুলো এন্টিরো ও এন্টি-লা এন্টিবডি হিসেবে পরিচিত। এই এন্টিবডিগুলো এসএলইতে আক্রান্ত প্রায় এক তৃতীয়াংশ রোগীর মধ্যে দেখা যায়। তবে, এই এন্টিবডি রয়েছে এমন অনেক মা নিউন্যাটাল লিউপাস রোগসহ সন্তান জন্ম দেন না। অপরপক্ষে, এসএলই তে আক্রান্ত নয় এমন প্রসূতি মার সন্তানে ও নিউন্যাটাল লিউপাস থাকতে পারে।
নিউন্যাটাল লিউপাস এসএলই থেকে ভিন্ন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে, নিউন্যাটাল লিউপাস ৩ থেকে ৬ মাস বয়সে এমনিতেই চলে যায় এবং কোন প্রকার ছাপ বা প্রভাব রেখে যায় না। সর্বাধিক প্রচলিত লক্ষণ হচ্ছে র‌্যাশ (লাল লাল ফুসকুড়ি) যা জন্মের কয়েক দিন বা সপ্তাহ পর দেখা যায় বিশেষ করে সূর্যালোকের সংস্পর্শে থাকলে। নিউন্যাটাল লিউপাস এর র‌্যাশ ক্ষণস্থায়ী এবং কোন ক্ষত ছাড়াই সেরে যায়। পরবর্তী যে লক্ষনটি বেশি দেখা যায় সেটি হচ্ছে অস্বাভাবিক রক্ত কনিকা কমে যাওয়ায়, যা খুব কম ক্ষেত্রেই মারাত্মক হয় এবং কোন প্রকার চিকিৎসা ছাড়াই কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায়।
খুব কম ক্ষেত্রে, জন্মগত হার্ট ব্লক নামে একটি বিশেষ রকমের হার্টবিট সংক্রান্ত অস্বাভাবিকতা ঘটে। কনজেনিটাল হার্ট ব্লকে, শিশুর শিরার গতি পালস হয় অস্বাভাবিকভাবে ধীর। এই অস্বাভাবিকতা স্থায়ী এবং ফোটাল কার্ডিয়াক আলট্রাসাউন্ড ব্যবহার করার মাধ্যমে গর্ভাবস্থার ১৫ থেকে ২৫ সপ্তাহের মধ্যে এটা ধরা পড়ে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে, অজাত শিশুর রোগ ও চিকিৎসা করা যায়। জর পর, কনজেনিটাল হার্ট ব্লকে আক্রান্ত অনেক শিশুর জন্য পেসমেকার ঢুকানো দরকার হয়। যদি কোন মার ইতোমধ্যে কনজেনিটাল হার্ট ব্লকে আক্রান্ত একটি সন্তান থেকে থাকে, তাহলে তার ১০% থেকে ১৫% ঝুকি থাকে যে, পরবর্তী শিশুও একই সমস্যা নিয়ে জন্ম হবে।
নিউন্যাটাল লিউপাসে আক্রান্ত শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ স্বাভাবিকই থাকে। তবে তাদের পরবর্তী জীবণে এসএলইতে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষীণ সম্ভাবনা থাকে।


 
সাহায্যকারী
This website uses cookies. By continuing to browse the website you are agreeing to our use of cookies. Learn more   Accept cookies