ফ্যামিলিয়াল মেডিটিরিয়ান ফিভার  


বিবরণ 2016
diagnosis
treatment
causes
Familial Mediterranean Fever
ফ্যামিলিয়াল মেডিটিরিয়ান ফিভার
ফ্যামিলিয়াল মেডিটেরেনিয়ান ফিভার একটি জীন বাহিত রোগ। রোগীরা দফায় দফায় জ্বর, সাথে পেট ব্যথা অথবা বুকে ব্যথা অথবা গিড়া ব্যথা ও ফোলা নিয়ে আসে। এই রোগ সাধারনত ভূমধ্যসাগরীয় এবং পূর্ব মধ্য গোত্রীয় জনগন বিশেষত ইহুদী, তার্কিস, আরব ও আমেরিকানদের মধ্যে বেশী দেখা যায়। ১
evidence-based
consensus opinion
2016
PRINTO PReS
ফ্যামিলিয়াল মেডিটিরিয়ান ফিভার কি?
২. রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা
৩. দৈনন্দিন জীবন



ফ্যামিলিয়াল মেডিটিরিয়ান ফিভার কি?

এটা কি ?
ফ্যামিলিয়াল মেডিটেরেনিয়ান ফিভার একটি জীন বাহিত রোগ। রোগীরা দফায় দফায় জ্বর, সাথে পেট ব্যথা অথবা বুকে ব্যথা অথবা গিড়া ব্যথা ও ফোলা নিয়ে আসে। এই রোগ সাধারনত ভূমধ্যসাগরীয় এবং পূর্ব মধ্য গোত্রীয় জনগন বিশেষত ইহুদী, তার্কিস, আরব ও আমেরিকানদের মধ্যে বেশী দেখা যায়।

১.২ ইহা/এটা কতটা কমন?
উচ্চ ঝুকিপূর্ণ জনগনের মধ্যে এই রোগের হার হাজারে ৩ জন। এটা অন্য বংশ/জাতিদের মধ্যে বিরল যা হোক এ রোগের সাথে সম্পর্কিত জিন আবিষ্কার হবার পর থেকে এ রোগের রোগ নির্ণয়ের হার কিছু বিরল যেসব জনগনের মধ্যে এ রোগ বিরল যেমন-ইতালীয়, গ্রীক এবং আমেরিকাদের মধ্যের এ রোগ নির্ণয় সম্ভব হয়েছে।
এফ. এম. এফ ৯০ শতাংশ রোগী ২০ (বিশ) বছর বয়সের আগেই আক্রান্ত হন। অর্ধেকের বেশি রোগীর ক্ষেত্রেই এটা ১ম দশকেই এ রোগ দেখা যায়। ছেলেরা মেয়েদেও চেয়ে বেশি আক্রান্ত হনং (১.৩ঃ১)

১.৩ এ রোগটির কারনগুলো কি কি ?
এফ এম এফ একটি জীনগত রোগ। এর জন্য দায়ী জীনটিকে বলা হয় এফইএফভি জীন এবং এটি প্রাকৃতিক ভাবে প্রদাহ (ইনফ্লামেশন) নিবারনে যে প্রোটিন কাজ করে, তাকে প্রভাবিত করে। যদি এই জিনে কোন পরিবর্তন থাকে এটি ঠিকমত কাজ করতে পারে না এবং রোগীরা জ্বরে ৩ বার বার জ্বরে আক্রান্ত হন।

১.৪ এটা কি উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত রোগ?
এটা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত "অটোজোমাল রেসেসিভ" রোগ যার অর্থ বাবা মার মধ্যে সাধারনত রোগের লক্ষনসমূহ দেখা যায় না। এই রকম সংক্রমনে যাদের এফএমএফ রোগ হবে, তাদের এমইএফডি জিনের দুই কপিতেই মিউটেশন বা পরিবর্তন থাকে (একটা বাবা থেকে আরেকটা মা থেকে প্রাপ্ত); যেহেতু বাবা মা দুজনই বাহক (একজন বাহকের একটা জিনে পরিবর্তন থাকে কিন্তু কারও মধ্যে অসুখটা থাকবে না)। যদি এই অসুখটা যৌথ পরিবারের মধ্যে থাকে, ধরা হয় এই অসুখ আপন ভাইবোন, চাচাতো মামাতো ভাইবোন, চাচা, খালা মামারা দূরবতী আতœীয়দের মধ্যেও থাকতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় যদি বাবা মার মধ্যে একজন বাহক ও আরেকজন আক্রান্ত হন, ৫০ শতাংশ সন্তান আক্রান্ত হবার সম্ভবনা থাকে। কিছু সংখক রোগীর ক্ষেত্রে একটি বা দুটি জীনই স্বাভাবিক থাকতে পারে।

১.৫ কেন আমার সন্তানের এই রোগ হল ? এটা কি প্রতিরোধ করা সম্ভব ?
আপনার সন্তানের এ রোগটা হয়েছে তার দুটি জীনেই মিউটেশন (পরিবর্তন) রয়েছে যা এফএমএফ করছে।

১.৬ এটা কি ছোঁয়াচে /সংক্রামক?
না, এটা ছোঁয়াচে নয়

১.৭ এ রোগের প্রধান লক্ষনগুলো কি কি ?
এ রোগের প্রধান লক্ষনগুলো হল ঘন ঘন জ্বর সাথে পেট ব্যথা, বুকে ব্যথা অথবা গিড়া ব্যথা। পেট ব্যথাটাই বেশী দেখা যায় শতকরা ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে। ২০-৪০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে বুকে ব্যথা এবং ৫০-৬০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে গিড়া ব্যথা হয়।
সাধারনত শিশুরা একই রকম লক্ষন দিয়ে বার বার আক্রান্ত হয় যেমন ঘন ঘন জ্বর ও পেট ব্যথা। তবুও কিছু রোগী আবার একেক সময় একেক লক্ষন নিয়ে আসে একটা অথবা কয়েকটা এক সাথে।
রোগের এই লক্ষণ সমূহ চিকিৎসা ছাড়াই ভাল হয় এবং প্রতিবার এক থেকে চার দিন থাকে। প্রতিবার আক্রমনের ক্ষেত্রে রোগী সম্পূর্ণ ভাল হয় এবং দুই আক্রমনের মাঝখানে রোগীরা ভাল থাকে। কোন কোন বার ব্যথা এত তীব্র হয় যে রোগী এবং রোগীর লোকদের চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হয়। তীব্র পেট ব্যথা মাঝে মাঝে আকষ্মিক এপেন্ডিসাইটিসের ব্যথার মত মনে হয় এবং কিছু রোগীর এপেন্ডিসাইটিসের জন্য পেটের অপারেশন করে।
যা হোক, কিছু আক্রমন, এমনটি একই রোগীর মধ্যে, এতই কম থাকে যে, পেটের অসস্তি নিয়ে বিভ্রান্ত থাকে। এজন্যই এফএমএফ রোগীদের সনাক্ত করা কঠিন। পেট ব্যথার সময় বাচ্চাদের পায়খানা শক্ত হয় কিন্তু পেট ব্যথা ভালো হওয়ার পর, পায়খানা আবার নরম হয়ে যায়।
কোন কোন সময় শিশুরা উচ্চ তাপমাত্রার নিয়ে আসে আবার কখনও কম/হালকা মাত্রার জ্বর থাকে। বুকে ব্যথা থাকেলে তা সাধারনত এক পাশে থাকে এবং এতটাই তীব্র হয় যে শিশুরা শ্বাস ঠিকমত নিতে পারে না। এটা কয়েকদিনের মধ্যেই ঠিক হয়ে যায়।
সাধারনত একটি গিড়াই এক বারে আক্রান্ত হয় (মনো আর্থাইটিস) এটা হতে পারে হাটু বা গোড়ালী। এটা এতটা ফুলে যেতে পারে এবং ব্যথা যুক্ত হতে পারে যে শিশুরা হাটতে পারে না। এক তৃতীয়াংশে ক্ষেত্রে গিড়ার উপরের চামড়া লাল হয়। গিড়ার ব্যথা অন্যান্য আক্রমনের চেয়ে/লক্ষনের চেয়ে দীর্ঘমেয়াদী হয় এবং ব্যথা কমতে চার থেকে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত লাগতে পারে। কিছু শিশুর শুধু ঘন ঘন গিড়া ব্যথা ও ফোলা নিয়ে আসে এবং রিউমাটিক ফিভার বা জুভেনাইল ইডিওপ্যাথিক আর্থাইটিস হিসেবে ভুল রোগ নির্নয় হয়।
৫-১০ শতাংশ ক্ষেত্রে গিড়া/গিড়ার আক্রমন দীর্ঘমেয়াদী হয় এবং গিড়ার ক্ষতি করে ফেলে।
কিছু ক্ষেত্রে এফএমএফ এ বৈশিষ্ট্য পূর্ণ দাগ বা ফুসকুরি থাকে সাধারনত নি¤œাঙ্গে এবং যাকে কিনা ইরাইসিপলাস মতন লালচে দেখা যায় আবার কিছু শিশু নি¤œাঙ্গের গিড়া ব্যথার সমস্যার কথা বলে।
কিছু এরোগে দুর্লভ আক্রমন ও দেখা যায় যেমন ঘন ঘন পেরিকার্ডাইটিস (হাটের বাইরের স্তরের প্রদাহ) মায়োসাইটিস (মাংশপেশীর প্রদাহ), মেনিনজাইটিস (বেইন এবং স্পাইনাল কর্ডের আবরনী পর্দার প্রদাহ) এবং পেডিঅর্কাইটিস (টেস্টিসের আবরনের প্রদাহ)

১.৮ এ রোগের সম্ভাব্য জটিলতাগুলো কি কি ?
হেনোচ সনলিন পারপুরা বা পলি আর্টারাইটিস নডোসাতে যেমন রক্ত নালীর প্রদাহ (ভাসকুলাইটিস) দেখা যায় সেরকম ভাইকুলাইটিস কিছু কিছু এফএমএফ এ আক্রান্ত বাচ্চার মধ্যেও দেখা যায়। সবচেয়ে ভয়াবহ জটিলতা হলো, যদি এফএমএফ এর চিকিৎসা না করা হয় তাহলে অ্যামাইলয়ডোসিস হয়। অ্যামাইলয়ড একটি বিশেষ প্রোটিন বা বিভিন্ন অঙ্গে যেমন কিডনী, অন্দ্রনালী, ত্বক, হার্টে জমা হয়ে এ সব অঙ্গের কার্যকারিতা নষ্ট করে ফেলে, বিশেষত কিডনীকে। এটি এফএসএফের জন্য নির্দিষ্ট নয় বরং যে কোন দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহ বা ইনফ্লামেশনের চিকিৎসা না করালে জটিলতা হিসেবে অ্যামাইলয়ডোসিস হতে পারে। প্রসাবে প্রোটিন এ রোগের পূর্বলক্ষন চিন্তা করা হয়। কিডনী বা অন্দ্রনালীতে অ্যামাইলয়ড পাওয়া গেলে এ রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। যেসব শিশুরা কলচিচিন পর্যাপ্ত ডোজে পাচ্ছে তারা এ ভয়াবহ জটিলতা থেকে ঝুকিমুক্ত।

১.৯ এ রোগ প্রত্যেক শিশুর ক্ষেত্রে এ রকম কি ?
এটা প্রত্যেক শিশুর ক্ষেত্রে এক রকম নয়। উপরন্তু এর আক্রমনের ধরন, মেয়াদ এবং ভয়াবহতা প্রত্যেকবার ভিন্ন ভিন্ন পারে,হতে পাওে, এমনকি এক শিশুর ক্ষেত্রেই।

১.১০ এ রোগ প্রাপ্ত বয়স্ক এবং বাচ্চাদের ক্ষেত্রে কি ভিন্ন ভিন্ন ?
সাধারনত বাচ্চাদের এফএমএফ বড়দের মতই। রোগের কিছু লক্ষন যেমন গিড়া ফোলা, মাংশপেশীর প্রদাহ মায়োসাইটিস এগুলো বাচ্চাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। বয়স যত বাড়তে থাকে এ রোগের পুনারাবৃত্তির হার/সংক্রমনের হার ততই কমতে থাকে। প্রাপ্ত পুরুষের চেয়ে অল্প বয়স্ক ছেলেদের মধ্যে পেরিআর্কাইটিস বা টেষ্টিসের বর্হিবাবনী প্রদাহ বেশী দেখা যায়। যেসব রোগীদের অল্প বয়সে রোগ শুরু হয় এবং চিকিৎসা হয় না তাদের অ্যামাইলয়ভোসিস হবার ঝুকি বেড়ে যায়।


২. রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা

২.১ কিভাবে এ রোগ নির্ণয় করা হয় ?
সাধারনত নি¤েক্ত উপায়ে এ রোগ নির্ণয় করা হয়

কখন সন্দেহ করবেন ? যদি শিশু কমপক্ষে তিনবার আক্রান্ত হয় তখনই এটি এফএমএফ হিসেবে ধরা হবে। জাতিসত্বার এবং আতœীয়দের মধ্যে একই রকমের সমস্যা অথবা কিডনীর সমস্যার বিস্তারিত জানতে হবে।
পিতামাতাকে পূর্বের আক্রমনের বিস্তারিত বর্ণনা জিজ্ঞেস করতে হবে।

ফলো আপ এফএমএফ হিসেবে সম্পূর্ণ নিশ্চিত ডায়াগনোসিস করার পূর্বে একটি শিশুকে ঘনিষ্ঠভাবে মনিটর করতে হবে। ফলো আপ এর সময় যদি সম্ভব হয় একটি রোগীকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে শারীরিক পরীক্ষা এবং প্রদাহ আছে কিনা দেখার জন্য রক্ত পরীক্ষা করে দেখা দরকার। সাধারনত পরীক্ষাগুলো প্রতিবার আক্রমনের সময় পজিটিভ হয় এবং আরগ্যো লাভের সময় স্বাভাবিক বা স্বাভাবিকের কাছাকাছি চলে আসে। বিভিন্ন কারনে একটি শিশুকে প্রতিবার আক্রমনের সময় দেখা সম্ভব হয় না। এ জন্য পিতামাতাকে একটি ডায়েরী রাখতে বলা হয় এবং বিস্তারিত লিখে রাখতে বলা হয়। তারা স্থানীয় ল্যাবরেটরীতে রক্ত পরীক্ষা করে দেখতে পারে।

কলচিচিন দিয়ে চিকিৎসায় প্রতিক্রিয়া ক্লিনিক্যাল এবং ল্যাবরেটরী পরীক্ষা করে যদি একটি শিশুকে এফএমএফ হিসেবে ডায়াগনোসিস করা হয়। তবে তাকে কমপক্ষে ছয় মাস ঈড়ষপযরপরহ দেয়া হয় এবং এরপর লক্ষনগুলো পুনরায় মূল্যায়ন করা হয়। এফএমএফ এর ক্ষেত্রে আক্রমন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় অথবা সংখ্যায়, তীব্রতা অথবা দীর্ঘমেয়াদী তা কমে যায়।
শুধুমাত্র উপরের/পূর্বের সবগুলো ধাপ পূরন করলেই একটি রোগীকে এফএমএফ হিসেবে ডায়াগনোসিস করা যায় এবং তাকে সারা জীবনের জন্য ঈড়ষপযরপরহ দেয়া হয়
যেহেতু এফএমএফ শরীরের বিভিন্ন তন্ত্রকে আক্রমন করে তাই রোগ নির্ণয় এবং ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ প্রভাবিত চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন হতে পারে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসগন হতে পারে শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ শিশু বা জেনারেল ব্রাত রোগ বিশেষজ্ঞ কিডনী রোগ বিশেষজ্ঞ এবং অন্ত্রবিদ/গ্যাস্ট্রএনর্দরোলজিম্ট।

জেনেটিক বিশ্লেষন সম্প্রতি জেনেটিক অ্যানালাইসিস করে জীনের পরিবর্তন/বিবর্তন নির্ণয় করা সম্ভব যা কিনা এফএমএফ রোগের জন্য দায়ী।
এফএমএফ এর ক্লিনিক্যাল ডায়াগনোসিস নিশ্চিত করা হয় যদি দুটো জীনেই পরিবর্তন পাওয়া যায়। বাবা এবং মা থেকে প্রাপ্ত দুটোতেই। শতকরা ৭০-৮০ ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে দুটো জীনে পরিবর্তন পাওয়া যায়। এর অর্থ এফএমএফ রোগীদের একটি জীনে পরিবর্তন বা কোন জিনেই পরিবর্তন নাও পাওয়া যেতে পারে, তাই এফএমএফ নির্ণয় এখনও ক্লিনিক্যাল সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল। জেনেটিক অ্যানালাইসিস সব চিকিৎসা কেন্দ্রে নাও হতে পারে।
জ্বর এবং পেটে ব্যথা শৈশব কালে খুবই কমন অভিযোগ। এজন্য উচ্চ ঝুকিপূর্ণ জনগনের মধ্যেও এফএমএফ নির্ণয় করা সহজ নয়। রোগ ধরা পড়তে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে। চিকিৎসা ছাড়া রোগীদের মধ্যে অ্যামাইলয়ডোসিস হবার ঝুকি রয়েছে বলে। এই রোগ নির্ণয়ের দীর্ঘসূত্রিতা কমিয়ে আনতে হবে।
ঘন ঘন জ্বর, পেটে ব্যথা এবং গিড়া ব্যথা নিয়ে আরও কিছু সংখ্যক রোগ রয়েছে। এর মধ্যে কিছু সংখ্যক রোগ জেনেটিক এবং একই রকম শারীরিক লক্ষন নিয়ে আবির্ভূত হয়; যদিও প্রত্যেকের স্বতন্দ্র ক্লিনিক্যাল এবং ল্যাবরেটরী বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

২.২ পরীক্ষা নিরীক্ষা করার গুরুত্ব কি?
ল্যাবরেটরী পরীক্ষা এফএমএফ নির্ণয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ইএসআর, সিআরপি, Whole blood count এবং ফিব্রিনোজেন এগুলো শরীরে, প্রদাহ আছে কিনা দেখার জন্য আক্রমনের সময় দেখা দরকার (কমপক্ষে ২৪-৪৮ ঘন্টা পর) শিশুর লক্ষনগুলো চলে যাবার পর পুনরায় পরীক্ষাগুলো করে দেখতে হবে, যে ফলগুলো টেস্টের রেজাল্ট স্বাভাবিক পর্যায়ে গেছে কিনা এক-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে টেস্টগুলো রেজাল্ট স্বাভাবিক হয়। বাকি দুই তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে তাৎপর্য পূর্ণভাবে কমে কিন্তু স্বাভাবিক মাত্রার একটু উপরে থাকে।
জেনেটিক বিশ্লেষনের জন্যও অল্প পরিমান রক্ত। যেসব বাচ্চারা সারা জীবনের জন্য Colchire দিয়ে চিকিৎসা পাচ্ছে তাদের বছরে দুইবার রক্ত ও প্রসাব পরীক্ষা করে দেখা দরকার।
প্রসাব পরীক্ষা করে প্রোটিন ও লোহিত রক্ত কনিকা দেখা হয়। আক্রমনের সময় সাময়িক পরিবর্তন হতে পারে কিন্তু সবসময় যদি প্রসাবে প্রোটিনের পরিমান বেশি থাকে সেক্ষেত্রে অ্যামাইলয়ডোসিস চিন্তা করতে হবে। চিকিৎসক ক্ষেত্রে বিশেষে কিডনী বা মলদ্বার থেকে মাংশপেশী পরীক্ষার জন্য পাঠাতে পারেন। মলদ্বারের বায়োপসিতে অল্প পরিমান মলদ্বার টিস্যু নেয়া হয়, এটি খুবই সহজ। যদি মলদ্বার বায়োপসিতে অ্যামাইলয়েড পাওয়া না যায় তবে কিডনী বায়োপসি করে নিশ্চিত করতে হবে। কিডনী বায়োপসি করতে হলে বাচ্চাকে এক রাত হাসপাতালে থাকতে হয়। বায়োপসিতে যে টিস্যু নেয়া হয় তা পরীক্ষা করে amyloid জমা হয়েছে কিনা দেখা হয়।

২.৩ এটার কি চিকিৎসা বা সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব
এমএমএফ সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব নয় কিন্তু সাবা জীবনের জন্য Colchicine দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। এভাবে ঘন ঘন আক্রমন কমিয়ে আনা বা প্রতিরোধ করা সম্ভব। কিন্তু রোগী যদি ঔষধ নেয়া বন্ধ করে দেয় তাহলে আক্রমন পুনরায় ঘন ঘন হবে এবং amydoidosis এর ঝুঁকি বেড়ে যাবে।

২.৪ চিকিৎসা কি?
এফএমএফ এর চিকিৎসা সহজ, কমদামী/ব্যয় বহুল নয় এবং যতদিন সঠিক মাত্রায় ঔষধ খাবে ঔষধের বড় ধরনের কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। বর্তমানে Colchicine নামে একটি প্রাকৃতিক উপাদান তৈরি ঔষধ এফএমএফ এর প্রতিরোধক/প্রতিষেধন হিসেবে ব্যবহার করা হয়। রোগ নির্ণয় হবার পর সারা জীবনের জন্য এ ঔষধ সেবন করতে হবে। ঠিকমত খেলে ৬০ শতাংশ রোগীর রোগের আক্রমন চলে যায়। ৩০ শতাংশ রোগীর আংশিক উপকার লাভ করে এবং ৫-১০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে এ ঔষধের কোন কার্যকারিতা থাকে না।
এই চিকিৎসা শুধু রোগের আক্রমনকে প্রতিরোধই করে না, বরং অ্যামাইলোয়ডিসিস এর ঝুঁকি ও কমিয়ে দেয়। এজন্য ডাক্তারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল রোগীকে এবং রোগীর বাবা মাকে এটা বোঝানো যে সঠিক পরিমাপ মত নিয়মিত ঔষধ খাওয়া তার জন্য কতটা জরুরী রোগীর অনুধাবন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রোগী যদি ডাক্তারের পরামর্শ মত নিয়মিত ঔষধ খায়, তাহলে সে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া পিতামাতার ঔষধের পরিমান পরিবর্তন করা উচিত নয়।
হঠাৎ আক্রমনের সময় ঔষধের পরিমান বাড়ানোর কোন কার্যকারিতা নেই। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আক্রমন প্রতিরোধ করা।
সেসব রোগীর কলচিচিন এ কাজ হয় না তাদের বায়োলজি এজেন্ট দিয়ে চিকিৎসা করা হয়।

২.৫ ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলো কিকি ?
একটি শিশু সারাজীবন ঔষধ খাবে এটা কেউ সহজে মেনে নিতে পারে না। পিতামাতারা অনেক সময় এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে চিন্তিত থাকে। এটি একটি নিরাপদ ঔষধ, যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই সামান্য এবং সাধারনত পরিমান কমালে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও কমে যায়। সবচেয়ে নিয়মিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হল ডায়রিয়া।
ঘন ঘন পাতলা পায়খানার কারনে কিছু বাচ্চা/শিশু ঔষধটা সহ্য করতে পারে না। এসব ক্ষেত্রে ঔষধের পরিমান কমিয়ে যে পরিমান সহ্য করতে পারে সেটা রাখা হয়। আস্তে আস্তে পরিমান বাড়িয়ে পূর্বের যথাযথ পরিমানে আনা হয় খাদ্য তালিকায় ল্যাকটোজ এর পরিমান ৩ সপ্তাহ কমিয়ে রাখা যায় এবং এতেও খাদ্যতন্ত্রের সমস্যাগুলোর কমে যায়।
অন্যান্য পর্শ্বপ্রতিক্রিয়া হল বমি ভাব, বমি হওয়া এবং পেট ব্যথা। বিরল কিছু ক্ষেত্রে মাংসপেশীর দুর্বলতাও দেখা যায়।

২.৬ চিকিৎসা কতদিন চলবে?
এফএমএফ এ সারাজীবনের জন্য প্রতিরোধক চিকিৎসা প্রয়োজন।

২.৭ কোন সম্পূরক বা রীতি বিরুদ্ধে চিকিৎসা রয়েছে?
এফএমএফ এ কোন সম্পূরক চিকিৎসা রয়েছে কি?

২.৮ নির্দিষ্ট সময় অন্তর কি পরীক্ষা করা দরকার?
যে সব শিশু চিকিৎসা পাচ্ছে তাদের বছরে অন্তত দুবার রক্ত ও প্রসাব পরীক্ষা করা দরকার।

২.৯ রোগটা কত দিন থাকবে?
এফএম এফ একটি জীবন ব্যাপী বা সারাজীবনের রোগ।

২.১০ এ রোগের দীর্ঘমেয়াদী আরোগ্য সম্ভবনা কি?
যদি কলচিচিনি দিয়ে ঠিকমত আজীবন চিকিৎসা চলে তাহলে শিশুরা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবে। যদি রোগ নির্ণয়ে বিলম্ব হয় বা ঔষধ ঠিকমত না খায়, তা হলে অ্যামাইলোডোসিস এর ঝুকি বেড়ে যায় যার পরিণতি ভাল নয়। যেসব শিশুদের অ্যামাইলোডোসিস হয় তাদের কিডনী ট্রাসপ্লান্ট বা প্রতিস্থাপন করতে হয়।
শিশুদের বৃদ্ধি কমে যাওয়া এফএমএফ এর বড় কোন সমস্যা নয়। কিছু বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধর সময় শুধুমাত্র কলচিচিনি দিয়ে চিকিৎসার ফলে শারীরিক বৃদ্ধি ঠিক হয়ে যায়।

২.১১ এটি কি সম্পূর্ণরূপে নিরাময় সম্ভব?
না, যেহেতু এটি একটি জীনগত রোগ, কলচিচিনি দিয়ে জীবনব্যাপী চিকিৎসা করালে রোগীরা কোন রকম প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবে এবং অ্যামাইলয়ডোসিলের ঝুঁকিও থাকবে না।


৩. দৈনন্দিন জীবন

৩.১ শিশু এবং শিশুর পরিবারের দৈনন্দিন জীবনের উপর এ রোগের প্রভাব কি?
শিশু এবং তার পরিবার রোগ নির্ণয় হবার পূবেই চরম দুর্দশার শিকার হয়। মারাতœক পেট ব্যথা, বুকে ব্যথা বা গিড়া ব্যথা সম্পর্কে ঘন ঘন পরামর্শ দান করা উচিত। কিছু শিশুদের ভুল রোগ নির্নত হয়ে অপ্রয়োজনীয় শৈল্য চিকিৎসা পায়। রোগ নির্ণয় হবার পর, মেডিকেল চিকিৎসার উদ্দেশ্য হচ্ছে শিশুকে এবং তার পরিবারকে একটি স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিত করা। এফএমএফ রোগীদের দীর্ঘমেয়াদী কলচিচিনি দিয়ে মেডিকেল চিকিৎসা দরকার এবং তারা অনেক কলচিচিনি ঠিকমত খায় না, ফলে রোগীর অ্যামাইলয়ডোসিস হবার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হল জীবনভর চিকিৎসার একটি মানসিক বোঝা। মনো সামাজিক সমর্থন এবং শিশু ও শিশুর বাবা মার শিক্ষা কার্যক্রম এ ব্যপারে সহায়তা করতে পারে।

৩.২ স্কুলের বিষয়ে কি করবে?
ঘন ঘন আক্রমন স্কুলের উপস্থিতি কমে যায়, কলচিচিন দিয়ে চিকিৎসার ফলে সমস্যার অনেকটা সমাধান সম্ভব।
স্কুলে এ রোগ সম্পর্কে জানিয়ে রাখা দরকার, যাতে আক্রমনের সময় কি করতে হবে নির্দিষ্ট কাউকে জানিয়ে রাখতে হবে।

৩.৩ খেলাধূলার ব্যাপারে কি পরামর্শ?
এফ এম এফ এর রোগীরা যারা কলচিচিন পাচ্ছে তারা যে কোন খেলাধূলা করতে পারে। বার বার গিড়া প্রদাহের ফলে গিড়ার গতির/চলাফেরায় সীমাবদ্ধতা দেখা যায়।

৩.৪ খাবার ব্যাপারে কি কোন বাধা আছে?
কোন নির্দিষ্ট খাবার নেই বা খাবারের ব্যাপারে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই।

৩.৫ এই অসুখের উপর কি আবহাওয়ার কোন প্রভাব আছে?
না, আবহাওয়ার কোন প্রভাব নেই।

শিশুকে কি টিকা দেয়া যাবে?
হ্যাঁ, শিশুকে টিকা দেয়া যাবে।

৩.৭ আক্রান্ত রোগীর গর্ভধারন, জন্মনিয়ন্ত্রন এবং যৌন জীবন সম্পর্কে?
এফএমএফ এর রোগীদের কলচিচিন আর, দেবার পূর্বে গর্ভধারনে সমসন্যা হতে পারে। কিন্তুকলচিচিন দেবার পর সমস্যা চলে যায়। যে ডোজে চিকিৎসা চলে তাতে শুক্রানুর সংখ্যা কমে যাওয়া একটি বিরল ঘটনা। মহিলা রোগীদের গর্ভধারন বা সন্তানকে বুকের দুধ পান করানোর সময় কলচিচিন বন্ধ করার প্রয়োজন নেই।


 
সাহায্যকারী
This website uses cookies. By continuing to browse the website you are agreeing to our use of cookies. Learn more   Accept cookies