মাজেদ কি  


বিবরণ 2016
diagnosis
treatment
causes
Majeed Syndrome
মাজেদ কি
মাজেদ সিনড্রোম একটি বিরল জেনেটিক রোগ। আক্রান্ত শিশুরা বার বারে দীর্ঘমেয়াদী মালটিফোকাল ডিসইরাইথ্রোপোয়েটিক এনিমিয়া (সিডিএ) ও ইনফ্লামেটোরী ডারমাটোসিসে ভোগে। প্রকোপ কেমন ? খুবই বিরল এবং কেবলমাত্র মধ্যপ্রাচ্যের (জর্ডান, টার্কীর) কিছু পরিবারে পাওয়া যায়। প্রকৃত প্রাদুর্ভাব ১০ লক্ষে ১ জনেরও কম। রোগটির কারণ কি ? ক্রোমজোম ১৮ পিতে অবস্থিত এলপিআইএন ২ জিন, যা লিপিন-২ প্রোটিনটিকে কোড করে তার মিউটেশনের কারনে এই রোগ হয়। গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে, এই প্রোটিনটি লিপিড মেটাবলিজমের সাথে সম্পর্কযুক্ত। তবে মাজেদ সিনড্রোমে কোন ধরনের চর্বির অস্বাভাবিকতা পাওয়া যায় নি। লিপিন-২ প্রদাহ নিয়ন্ত্রণ ও কোষ বিভাজনে ও ভূমিকা রাখতে পারে। এলপিআইএন২ জিনের মিডটেশন লিপিন ২ এর গঠন ও কাজকে পরিবর্তিত করে। এসকল জিনগত পরিবর্তন কিভাবে হাড়ের রোগ, রক্তশূন্যতা ও চর্মের প্রদাহ করে তা এখনো পরিষ্কার নয়। এটি কি বংশগত ? এটি অটোজমাল রিসেসিভ হিসাবে উত্তরাধীকার সূত্রে প্রাপ্ত ( তার মানে এটি লিঙ্গের সাথে সম্পৃক্ত নয় এবং বাবা মা কারো মাঝে এ রোগের লক্ষণ থাকা জরুরী নয়)। মাজেদ সিনড্রোম থাকার জন্য দুটো মিউটেটেড জিন থাকা প্রয়োজন যার একটি বাবা ও অন্যটি মা থেকে আসবে। কাজেই বাবা মার প্রত্যেকেই ক্যারিয়ার (একজন ক্যারিয়ারের কেবল একটি মিউটেটেভ কপি থাকে, কিন্তু রোগ থকে না) এবং তারা রোগী নয়। যদিও স্বভাবতই ক্যারিয়ারেরা রোগের লক্ষণ প্রকাশ করে না, কিছু বাবা মার মধ্যে সোরিয়াসিস নামক চর্মরোগ দেখা যায়। মাজেদ সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশুদের পিতামাতার পরবতীর্তে একই রোগে আক্রান্ত সন্তান জন্মদানের সম্ভাবনা শতকরা ২৫ ভাগ। গর্ভাবস্থায় রোগ নির্ণয় সম্ভব। কেন আমার সন্তানের এই রোগ হল ? এটি কি প্রতিরোধ যোগ্য ? বা”্চার এই রোগ হয়েছে কারণ সে মিডটেটেড জিন নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে যা মাজেদ সিনড্রোম করে। এটি কি সংক্রামক ? না, তা নয়। প্রধান লক্ষণসমূহ কি ? ক্রনিক রিকারেন্ট মাল্টিফোকাল অস্টিওমায়েলাইটিস (সিআরএমও) কনজেনিটাল ডিসইরাইথ্রোপোয়েটিক এনিমিয়া (সিডিএ) এবং ইনফ্লোমেটরী ডারমাটোসিস। এই রোগের সাথে সম্পৃক্ত সিআরএমও এর সাথে এককভাবে সংঘটিত সিআরএমও পার্থক্য করা যায় কম বয়সে (এক বছর বয়সের মধ্যে) শুরু হওয়া, ঘন ঘন হওয়া, সংক্ষিপ্ত ও খুবই কম প্রশমন এবং এই সত্যি দ্বারা যে সম্ববত এটি আজীবনের রোগ, যাতে বৃদ্ধি ব্যহত হয় এবং অঙ্গবিকৃতি দেখা যায়। সিডিএ তে রক্তেও মেরুরজ্জুতে মাইক্রোসাইটোসিস দেখা যায়। এটি বিভিন্নমাত্রার হতে পারে, মৃদু অল্পমাত্রার রক্তশূন্যতা হতে রক্ত সঞ্চালন প্রয়োজন হয় এরূপ মাত্রার রক্তশূন্যতা। চর্মের প্রদাহ সাধারনত সুইট সিনড্রোম, কিন্তু পাসটুলোসিস ও হতে পরে। কি কি জটিলতা হতে পারে ? সিআরএমও হতে বেশ কিছু জটিলতা, যেমন বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া এবং কনট্রাকচার নামক অস্থিসন্ধির বিকৃতি হতে পারে যা আক্রান্ত প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক নড়াচড়া সীমাবদ্ধ করে। রক্তশূন্যতা হতে ক্লান্তি (অবসাদ), দুর্বলতা, ফ্যাকাশে চামড়া ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। কনজেনিটাল ডিসইরাইথ্রোপোয়েটিক এনিমিয়ার জটিলতা অল্প হতে প্রকট আকারের হতে পারে। রোগটি কি সকল বাচ্চার ক্ষেত্রে একই? যেহেতু রোগটি খুবই বিরল, তাই এর লক্ষণসমূহের প্রকারভেদ সম্পর্কে খুব কমই জানা আছে। যেকোন ক্ষেত্রে লক্ষণসমূহের মাত্রার পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় যা মৃদু আকার হতে প্রকট আকার ধারন করতে পারে। শিশু ও প্্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে রোগের প্রকার কি ভিন্ন ? এ রোগের স্বাভাবিক গতি সম্পর্কে খুব কম জানা আছে। যেকোন ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্ক রোগী বেশী অক্ষমতা ও জটিলতা ভোগ করে। রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা কিভাবে রোগ নির্ণয় করা হয় ? শারীরিক লক্ষণসমূহের ভিত্তিতে এই রোগের ব্যাপারে সন্দেহ পোষন করতে হয়। তবে তা জেনেটিক এনালাইসিসের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হয়। যদি বাবা মায়ের প্রতিজন হতে একটি প্রকট করে মোট দুইটি মিউটেটেড জিন প্রাপ্ত হয়, তবে এই রোগের ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে বলা যায়। তবে সকল বড় প্রতিষ্ঠানে জেনেটিক এনালাইসিসের সুবিধা নাও থাকতে পারে। পরীক্ষা নিরীক্ষার দূরুত্ব কি ? রক্ত পরীক্ষা যেমন (ঊঝজ), ঈজচ এবং ফিব্রিনোজেন রোগকালে জরুরী, কেননা এসকল পরীক্ষার মাধ্যমে প্রদাহ ও রক্ত শূন্যতার পরিমান জানা যায়। পরীক্ষাগুলোর ফলাফল স্বাভাবিক বা প্রায় স্বাভাবিক হলে এগুলো মাঝে মাঝে আবার করিয়ে সাম্প্রতিক অবস্থা দেখতে হবে। জেনেটিক এনালাইসিসের জন্য ও অল্প পরিমাণ রক্তের প্রয়োজন হবে। এটি কি চিকিৎসাযোগ্য বা সম্পূর্ণভাবে নিরাময় যোগ্য ? জেনেটিক রোগ বিধায় এটি চিকিৎসাযোগ্য, তবে নিরাময়যোগ্য নয়। চিকিৎসা কি ? মাজেদ সিনড্রোমের জন্য কোন আদর্শ চিকিৎসা পদ্ধতি নাই। সাধারনত সিআরএমও প্রথম অবস্থায় এনএসআইডি দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। মাংসপেশী শুকিয়ে যাওয়া ও অঙ্গবিকৃতি প্রতিরোধ করতে ফিজিওথেরাপী জরুরী। এনএসএআইডিতে কাজ না হলে সিআরএমও ও চর্মের লক্ষণাদি নিয়ন্ত্রনের জন্য কর্টিকোস্টেরয়েড ব্যবহার করা যেতে পারে। যদিও দীর্ঘদিন কর্টিকোস্টেরয়েড ব্যবহারের জটিলতার কারনে তা শিশুদের ক্ষেত্রে কম ব্যবহত হয়। সম্প্রতি, এরকম দুটি শিশুর ক্ষেত্রে এন্টি আই এল-১ ঔষধটির ভাল কার্যকারিতা দেখা গেছে। প্রয়োজন হলে সিডিএ তে লোহিত কণিকা পরিসঞ্চালনের দ্বারা চিকিৎসা করতে হবে। ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কি ? কর্টিকোস্টেরয়েডের সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে ওজন বৃদ্ধি, মুখ ফুলে যাওয়া ও মনোভাবের পরিবর্তন। দীর্ঘদিন ধরে স্টেরয়েড সেবন করলে বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, অস্টিওপোরোসিস, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস হতে পারে। এনাকিনরার সবচেয়ে যন্ত্রনাদায়ক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হচ্ছে ইঞ্জেকশনের স্থানে ব্যাথা যা পোকা মাকড়ের কামড়ের মত। বিশেষভাবে চিকিৎসার প্রথম সপ্তাহে তা আসলেই যথেষ্ট ব্যাথাময়। এনাকিনরা বা ক্যানাকিনোমাব দ্বারা মাজেদ সিনড্রোম ছাড়া যেসকল রোগের চিকিৎসা করা হয় তাদের ক্ষেত্রে জীবানু সংক্রমণ দেখা যায়। কতদিন চিকিৎসা করতে হবে ? আজীবন। সচরাচর দেখা যায় না বা বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি কি? এরোগের জন্য এ ধরনের কোন চিকিৎসা পদ্ধতি জানা যায় নি। মাঝে মাঝে কি ধরনের চেক আপ জরুরী? একজন শিশু রিউমাটোলজিস্ট দ্বারা নিয়মিত (বছরে ৩ বার) রোগ নিয়ন্ত্রনে আছে কিনা বা চিকিৎসা সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা জানতে চেক আপের প্রয়োজন। প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে কিনা, বা রক্ত পরিসঞ্চালন জরুরী কিনা তা নির্ণয়ের জন্য মাঝে মাঝে সিবিসি ও একিউট ফেজ রি একটান্ট পরীক্ষাগুলো করা উচিত। রোগটি কতদিন থাকবে। আজীবন, তবে রোগের মাত্রা সময়ের সাথে উঠা নামা করতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী পরিণাম কি ? নির্ভর করে রোগের মাত্রার উপর, বিশেষ করে ডিজইরাইথ্রোপোয়েটিক এনিমিয়া ও জটিলতার উপর। চিকিৎসা না করলে বারবার ব্যাথা, ক্রনিক এনিমিয়া ও নানাবিধ জটিলতা যেমন অঙ্গবিকৃতি ও মাংসপেশী শুকিয়ে যাওয়ার ফলে জীবন যাত্রার মান হ্রাস পায়। সম্পূর্ণ আরোগ্যলাভ কি সম্ভব ? না, কেননা এটি জেনেটিক রোগ । দৈনন্দিন জীবন শিশু ও তার পরিবারের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় এ রোগ কি ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে ? রোগ নিণয়ের পূর্বে তারা বড় ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে। কিছু শিশুর অঙ্গবিকৃতি ঘটে, যাতে তার প্রতিদিনের কাজকর্ম চরমভাবে ব্যাহত হয়। আরেকটি সমস্যা হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার কারনে মানসিক সমস্যা। এক্ষেত্রে রোগী ও অভিভাবকের জন্য এডুকেশন প্রোগ্রাম আয়োজন করা যেতে পারে। স্কুলে যাওয়ার ব্যাপারটি কেমন ? দীর্ঘমেয়াদী রোগে আক্রান্ত শিশুদের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া খুবই জরুরী। কিছু কিছু কারনে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতি হতে পারে এবং তাই শিশুর শিক্ষকদের নিকট এ রোগ ব্যাখ্যা করা গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য স্বাভাবিক শিশুদের মত এসব শিশুরাও যাতে স্কুলের সকল কাজে অংশগ্রহণ করতে পারে এ ব্যাপারে অভিভাবক ও শিক্ষকমন্ডলীর ভূমিকা পালন করতে হবে যাতে কেবল লেখাপড়ার ক্ষেত্রেই নয়, বরং আক্রান্ত শিশুটি সমবয়সী ও বড়দের দ্বারাও সমাদৃত হয়। এরকম তরুণ রোগীদের ভবিষ্যত পেশাগত জীবনে অন্তর্ভূক্তি ও দীর্ঘমেয়াদী রোগীদের গ্লোবাল কেয়ারের অন্যতম লক্ষ্য। খেলাধুলা করা যাবে ? খেলাধুলা শিশুদের জীবনের অন্যতম অংশ। শিশুদের স্বাভাবিক জীবন চর্চা নিশ্চিত করা যাতে তারা না অনুভব করে। যে তারা অন্যদের থেকে আলাদা, আর এটাই এই চিকিৎসার অন্যতম লক্ষ্য চিকিৎসার একটি অন্যতম লক্ষ্য। কাজেই সকল কাজকর্মে যতটা সম্ভব অংশগ্রহন করতে দিতে হবে। তবে রোগভোগকালে কম কাজকর্ম করা ও বিশ্রাম নেয়া জরুরী। খাবার দাবার ? নির্দিষ্ট কোন খাদ্য তালিকা নেই। রোগের উপর জলবায়ুর কি কোন ভূমিকা রয়েছে ? না টীকা দেয়া যাবে ? হ্যাঁ, টীকা দেয়া যাবে। তবে লাইভ ভ্যাকসিন দেয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। যৌনজীবন, গর্ভধারন ও জ¤œ নিয়ন্ত্রণ কি? এখন পর্যন্ত এ বিষয়ক কোন তথ্য জানা যায়নি। তবে স্বাভাবিক নিয়মে, অন্যান্য অটোইনফ্লামেটরী রোগের মতই চিকিৎসার সাথে সামঞ্জস্য রেখে গর্ভপরিকল্পনা করতে হবে কারন ভ্রুনের উপর বায়োলজিক এজেন্টগুলোর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে।
evidence-based
consensus opinion
2016
PRINTO PReS
মাজেদ কি ?
রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা
দৈনন্দিন জীবন



মাজেদ কি ?

এটা কি ?
মাজেদ সিনড্রোম একটি বিরল জেনেটিক রোগ। আক্রান্ত শিশুরা বার বারে দীর্ঘমেয়াদী মালটিফোকাল ডিসইরাইথ্রোপোয়েটিক এনিমিয়া (সিডিএ) ও ইনফ্লামেটোরী ডারমাটোসিসে ভোগে।

প্রকোপ কেমন ?
খুবই বিরল এবং কেবলমাত্র মধ্যপ্রাচ্যের (জর্ডান, টার্কীর) কিছু পরিবারে পাওয়া যায়। প্রকৃত প্রাদুর্ভাব ১০ লক্ষে ১ জনেরও কম।

রোগটির কারণ কি ?
ক্রোমজোম ১৮ পিতে অবস্থিত এলপিআইএন ২ জিন, যা লিপিন-২ প্রোটিনটিকে কোড করে তার মিউটেশনের কারনে এই রোগ হয়। গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে, এই প্রোটিনটি লিপিড মেটাবলিজমের সাথে সম্পর্কযুক্ত। তবে মাজেদ সিনড্রোমে কোন ধরনের চর্বির অস্বাভাবিকতা পাওয়া যায় নি।
লিপিন-২ প্রদাহ নিয়ন্ত্রণ ও কোষ বিভাজনে ও ভূমিকা রাখতে পারে।
এলপিআইএন২ জিনের মিডটেশন লিপিন ২ এর গঠন ও কাজকে পরিবর্তিত করে। এসকল জিনগত পরিবর্তন কিভাবে হাড়ের রোগ, রক্তশূন্যতা ও চর্মের প্রদাহ করে তা এখনো পরিষ্কার নয়।

এটি কি বংশগত ?
এটি অটোজমাল রিসেসিভ হিসাবে উত্তরাধীকার সূত্রে প্রাপ্ত ( তার মানে এটি লিঙ্গের সাথে সম্পৃক্ত নয় এবং বাবা মা কারো মাঝে এ রোগের লক্ষণ থাকা জরুরী নয়)। মাজেদ সিনড্রোম থাকার জন্য দুটো মিউটেটেড জিন থাকা প্রয়োজন যার একটি বাবা ও অন্যটি মা থেকে আসবে। কাজেই বাবা মার প্রত্যেকেই ক্যারিয়ার (একজন ক্যারিয়ারের কেবল একটি মিউটেটেভ কপি থাকে, কিন্তু রোগ থকে না) এবং তারা রোগী নয়। যদিও স্বভাবতই ক্যারিয়ারেরা রোগের লক্ষণ প্রকাশ করে না, কিছু বাবা মার মধ্যে সোরিয়াসিস নামক চর্মরোগ দেখা যায়। মাজেদ সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশুদের পিতামাতার পরবতীর্তে একই রোগে আক্রান্ত সন্তান জন্মদানের সম্ভাবনা শতকরা ২৫ ভাগ। গর্ভাবস্থায় রোগ নির্ণয় সম্ভব।

কেন আমার সন্তানের এই রোগ হল ? এটি কি প্রতিরোধ যোগ্য ?
বা”্চার এই রোগ হয়েছে কারণ সে মিডটেটেড জিন নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে যা মাজেদ সিনড্রোম করে।

এটি কি সংক্রামক ?
না, তা নয়।

প্রধান লক্ষণসমূহ কি ?
ক্রনিক রিকারেন্ট মাল্টিফোকাল অস্টিওমায়েলাইটিস (সিআরএমও) কনজেনিটাল ডিসইরাইথ্রোপোয়েটিক এনিমিয়া (সিডিএ) এবং ইনফ্লোমেটরী ডারমাটোসিস। এই রোগের সাথে সম্পৃক্ত সিআরএমও এর সাথে এককভাবে সংঘটিত সিআরএমও পার্থক্য করা যায় কম বয়সে (এক বছর বয়সের মধ্যে) শুরু হওয়া, ঘন ঘন হওয়া, সংক্ষিপ্ত ও খুবই কম প্রশমন এবং এই সত্যি দ্বারা যে সম্ববত এটি আজীবনের রোগ, যাতে বৃদ্ধি ব্যহত হয় এবং অঙ্গবিকৃতি দেখা যায়। সিডিএ তে রক্তেও মেরুরজ্জুতে মাইক্রোসাইটোসিস দেখা যায়। এটি বিভিন্নমাত্রার হতে পারে, মৃদু অল্পমাত্রার রক্তশূন্যতা হতে রক্ত সঞ্চালন প্রয়োজন হয় এরূপ মাত্রার রক্তশূন্যতা। চর্মের প্রদাহ সাধারনত সুইট সিনড্রোম, কিন্তু পাসটুলোসিস ও হতে পরে।

কি কি জটিলতা হতে পারে ?
সিআরএমও হতে বেশ কিছু জটিলতা, যেমন বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া এবং কনট্রাকচার নামক অস্থিসন্ধির বিকৃতি হতে পারে যা আক্রান্ত প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক নড়াচড়া সীমাবদ্ধ করে। রক্তশূন্যতা হতে ক্লান্তি (অবসাদ), দুর্বলতা, ফ্যাকাশে চামড়া ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। কনজেনিটাল ডিসইরাইথ্রোপোয়েটিক এনিমিয়ার জটিলতা অল্প হতে প্রকট আকারের হতে পারে।

রোগটি কি সকল বাচ্চার ক্ষেত্রে একই?
যেহেতু রোগটি খুবই বিরল, তাই এর লক্ষণসমূহের প্রকারভেদ সম্পর্কে খুব কমই জানা আছে। যেকোন ক্ষেত্রে লক্ষণসমূহের মাত্রার পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় যা মৃদু আকার হতে প্রকট আকার ধারন করতে পারে।

শিশু ও প্্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে রোগের প্রকার কি ভিন্ন ?
এ রোগের স্বাভাবিক গতি সম্পর্কে খুব কম জানা আছে। যেকোন ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্ক রোগী বেশী অক্ষমতা ও জটিলতা ভোগ করে।

রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা

কিভাবে রোগ নির্ণয় করা হয় ?
শারীরিক লক্ষণসমূহের ভিত্তিতে এই রোগের ব্যাপারে সন্দেহ পোষন করতে হয়। তবে তা জেনেটিক এনালাইসিসের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হয়। যদি বাবা মায়ের প্রতিজন হতে একটি প্রকট করে মোট দুইটি মিউটেটেড জিন প্রাপ্ত হয়, তবে এই রোগের ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে বলা যায়। তবে সকল বড় প্রতিষ্ঠানে জেনেটিক এনালাইসিসের সুবিধা নাও থাকতে পারে।

পরীক্ষা নিরীক্ষার দূরুত্ব কি ?
রক্ত পরীক্ষা যেমন (ঊঝজ), ঈজচ এবং ফিব্রিনোজেন রোগকালে জরুরী, কেননা এসকল পরীক্ষার মাধ্যমে প্রদাহ ও রক্ত শূন্যতার পরিমান জানা যায়।
পরীক্ষাগুলোর ফলাফল স্বাভাবিক বা প্রায় স্বাভাবিক হলে এগুলো মাঝে মাঝে আবার করিয়ে সাম্প্রতিক অবস্থা দেখতে হবে। জেনেটিক এনালাইসিসের জন্য ও অল্প পরিমাণ রক্তের প্রয়োজন হবে।

এটি কি চিকিৎসাযোগ্য বা সম্পূর্ণভাবে নিরাময় যোগ্য ?
জেনেটিক রোগ বিধায় এটি চিকিৎসাযোগ্য, তবে নিরাময়যোগ্য নয়।

চিকিৎসা কি ?
মাজেদ সিনড্রোমের জন্য কোন আদর্শ চিকিৎসা পদ্ধতি নাই। সাধারনত সিআরএমও প্রথম অবস্থায় এনএসআইডি দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। মাংসপেশী শুকিয়ে যাওয়া ও অঙ্গবিকৃতি প্রতিরোধ করতে ফিজিওথেরাপী জরুরী। এনএসএআইডিতে কাজ না হলে সিআরএমও ও চর্মের লক্ষণাদি নিয়ন্ত্রনের জন্য কর্টিকোস্টেরয়েড ব্যবহার করা যেতে পারে। যদিও দীর্ঘদিন কর্টিকোস্টেরয়েড ব্যবহারের জটিলতার কারনে তা শিশুদের ক্ষেত্রে কম ব্যবহত হয়। সম্প্রতি, এরকম দুটি শিশুর ক্ষেত্রে এন্টি আই এল-১ ঔষধটির ভাল কার্যকারিতা দেখা গেছে। প্রয়োজন হলে সিডিএ তে লোহিত কণিকা পরিসঞ্চালনের দ্বারা চিকিৎসা করতে হবে।

ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কি ?
কর্টিকোস্টেরয়েডের সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে ওজন বৃদ্ধি, মুখ ফুলে যাওয়া ও মনোভাবের পরিবর্তন। দীর্ঘদিন ধরে স্টেরয়েড সেবন করলে বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, অস্টিওপোরোসিস, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস হতে পারে।
এনাকিনরার সবচেয়ে যন্ত্রনাদায়ক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হচ্ছে ইঞ্জেকশনের স্থানে ব্যাথা যা পোকা মাকড়ের কামড়ের মত। বিশেষভাবে চিকিৎসার প্রথম সপ্তাহে তা আসলেই যথেষ্ট ব্যাথাময়। এনাকিনরা বা ক্যানাকিনোমাব দ্বারা মাজেদ সিনড্রোম ছাড়া যেসকল রোগের চিকিৎসা করা হয় তাদের ক্ষেত্রে জীবানু সংক্রমণ দেখা যায়।

কতদিন চিকিৎসা করতে হবে ?
আজীবন।

সচরাচর দেখা যায় না বা বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি কি?
এরোগের জন্য এ ধরনের কোন চিকিৎসা পদ্ধতি জানা যায় নি।

মাঝে মাঝে কি ধরনের চেক আপ জরুরী?
একজন শিশু রিউমাটোলজিস্ট দ্বারা নিয়মিত (বছরে ৩ বার) রোগ নিয়ন্ত্রনে আছে কিনা বা চিকিৎসা সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা জানতে চেক আপের প্রয়োজন। প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে কিনা, বা রক্ত পরিসঞ্চালন জরুরী কিনা তা নির্ণয়ের জন্য মাঝে মাঝে সিবিসি ও একিউট ফেজ রি একটান্ট পরীক্ষাগুলো করা উচিত।

রোগটি কতদিন থাকবে।
আজীবন, তবে রোগের মাত্রা সময়ের সাথে উঠা নামা করতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদী পরিণাম কি ?
নির্ভর করে রোগের মাত্রার উপর, বিশেষ করে ডিজইরাইথ্রোপোয়েটিক এনিমিয়া ও জটিলতার উপর। চিকিৎসা না করলে বারবার ব্যাথা, ক্রনিক এনিমিয়া ও নানাবিধ জটিলতা যেমন অঙ্গবিকৃতি ও মাংসপেশী শুকিয়ে যাওয়ার ফলে জীবন যাত্রার মান হ্রাস পায়।

সম্পূর্ণ আরোগ্যলাভ কি সম্ভব ?
না, কেননা এটি জেনেটিক রোগ ।


দৈনন্দিন জীবন

শিশু ও তার পরিবারের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় এ রোগ কি ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে ?
রোগ নিণয়ের পূর্বে তারা বড় ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে।
কিছু শিশুর অঙ্গবিকৃতি ঘটে, যাতে তার প্রতিদিনের কাজকর্ম চরমভাবে ব্যাহত হয়। আরেকটি সমস্যা হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার কারনে মানসিক সমস্যা। এক্ষেত্রে রোগী ও অভিভাবকের জন্য এডুকেশন প্রোগ্রাম আয়োজন করা যেতে পারে।

স্কুলে যাওয়ার ব্যাপারটি কেমন ?
দীর্ঘমেয়াদী রোগে আক্রান্ত শিশুদের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া খুবই জরুরী। কিছু কিছু কারনে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতি হতে পারে এবং তাই শিশুর শিক্ষকদের নিকট এ রোগ ব্যাখ্যা করা গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য স্বাভাবিক শিশুদের মত এসব শিশুরাও যাতে স্কুলের সকল কাজে অংশগ্রহণ করতে পারে এ ব্যাপারে অভিভাবক ও শিক্ষকমন্ডলীর ভূমিকা পালন করতে হবে যাতে কেবল লেখাপড়ার ক্ষেত্রেই নয়, বরং আক্রান্ত শিশুটি সমবয়সী ও বড়দের দ্বারাও সমাদৃত হয়। এরকম তরুণ রোগীদের ভবিষ্যত পেশাগত জীবনে অন্তর্ভূক্তি ও দীর্ঘমেয়াদী রোগীদের গ্লোবাল কেয়ারের অন্যতম লক্ষ্য।

খেলাধুলা করা যাবে ?
খেলাধুলা শিশুদের জীবনের অন্যতম অংশ। শিশুদের স্বাভাবিক জীবন চর্চা নিশ্চিত করা যাতে তারা না অনুভব করে। যে তারা অন্যদের থেকে আলাদা, আর এটাই এই চিকিৎসার অন্যতম লক্ষ্য চিকিৎসার একটি অন্যতম লক্ষ্য। কাজেই সকল কাজকর্মে যতটা সম্ভব অংশগ্রহন করতে দিতে হবে। তবে রোগভোগকালে কম কাজকর্ম করা ও বিশ্রাম নেয়া জরুরী।

খাবার দাবার ?
নির্দিষ্ট কোন খাদ্য তালিকা নেই।

রোগের উপর জলবায়ুর কি কোন ভূমিকা রয়েছে ?
না

টীকা দেয়া যাবে ?
হ্যাঁ, টীকা দেয়া যাবে। তবে লাইভ ভ্যাকসিন দেয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

যৌনজীবন, গর্ভধারন ও জ¤œ নিয়ন্ত্রণ কি?
এখন পর্যন্ত এ বিষয়ক কোন তথ্য জানা যায়নি। তবে স্বাভাবিক নিয়মে, অন্যান্য অটোইনফ্লামেটরী রোগের মতই চিকিৎসার সাথে সামঞ্জস্য রেখে গর্ভপরিকল্পনা করতে হবে কারন ভ্রুনের উপর বায়োলজিক এজেন্টগুলোর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে।


 
সাহায্যকারী
This website uses cookies. By continuing to browse the website you are agreeing to our use of cookies. Learn more   Accept cookies